নোয়াখালী প্রতিনিধি
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নির্যাতনের শিকার সেই গৃহবধূ দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন এবং তার সহযোগী আবুল কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় ওই নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, ২ সেপ্টেম্বর দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের আগে দেলোয়ার তাকে দু’বার ধর্ষণ করেছিল। এর মধ্যে একবার ধর্ষণ করা হয় প্রায় এক বছর আগে। আর দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করা হয় রমজান মাসের কিছুদিন আগে। দ্বিতীয়বার ধর্ষণের ঘটনার দিন দেলোয়ারের সহযোগী কালামও তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরী বলেন, দেলোয়ারকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। এছাড়া আরেক আসামি আবুল কালামকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দলের কাছে নির্যাতনের শিকার ওই নারী এসব তথ্য জানান।
তদন্ত দলের প্রধান মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর বলেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে ওই নারী দেলোয়ারের নামে মামলা করেননি। এমনকি আদালতে ২২ ধারার জবানবন্দিতে নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়ের কারণে দেলোয়ারের নাম বলেননি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে র্যাবের হাতে গ্রেফতার দেলোয়ারকে অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে তাকে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়। আদালত শুনানি শেষে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের খালপাড় এলাকায় ওই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও আবদুর রহিমসহ ৫ তরুণ। ঘটনার ৩২ দিন পর রবিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় রবিবার রাতেই দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে আটকও করা হয়েছে।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকে। তিনি প্রাণপণে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু, তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেনি। বরং হামলাকারীদের একজন তার মুখমণ্ডলে লাথি মারে ও পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেয়। এরপর একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করতে থাকে। এসময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চেঁচায় আরেকজন।
এই ঘটনার ৩২ দিন পর তা প্রকাশ পায়। পরে ওই নারী ৯ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করেন। এর মধ্যে আট জন গ্রেফতার হয়েছে। রবিবার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার রহিম (২০) ও রাতে একই এলাকার রহমত উল্যাহ (৪১)-কে গ্রেফতার করে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ। সোমবার মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
সোমবার রাতে একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ (৪৮) ও সাজু (২১) গ্রেফতার হয়। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) গভীর রাতে সোহাগ ও নূর হোসেন নামে দেলোয়ারের দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]