মোঃ ইনছান আলী জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ দৈনিক শিরোমণিঃ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের সেনাসদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী ডালিম মন্ডল গোপনে সৌদি পালিয়ে গেছেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমান বলে তার পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে। ডালিম মন্ডল সৌদি আরবের জেদ্দার একটি তেল পাম্পে কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। ডালিম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভুলটিয়া গ্রামের সবোদ আলী মন্ডলের ছেলে। গত বুধবার খুলনা বিভাগীয় দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে সেনা সদস্য সাইফ হত্যা মামলায় যে ৮ আসামীর মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রদান করেন তার মধ্যে ডালিম অন্যতম। পুলিশের এতো সব গোয়েন্দা বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামীর দেশ্য ত্যাগ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, রিন্যুয়াল পাসপোর্ট ছিল আসামী ডালিমের। ২০১৮ সালে ১৮ আগস্ট সেনা বাহিনীর ল্যন্স কর্পোরাল সাইফুল ইসলাম হত্যা হলে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। সাড়ে তিন মাস জেলে থাকার পর উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি ছাড়া পান। এরপর গোপনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যদি এসবি ও ডিএসবিকে আগে ভাগেই তথ্য দিয়ে জানিয়ে রাখতেন, তবে আসামীর জন্য দেশ ত্যাগ সহজ ছিল না। তারপরও আসামীকে দেশ ছাড়ার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়েছে। কি ভাবে আসামী ডালিম পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেল তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে আইনজ্ঞরা মনে করেন। সেনা সদস্য সাইফুলের পিতা হাফিজ উদ্দীন হাবু ও মা বুলবুলি খাতুন জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। সরকার ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী ডালিমকে ফিরিয়ে আনতে পারে। ইতিপুর্বে অনেক আসামীকে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে এনেছে। ডালিম ছাড়াও সেনা সদস্য সাইফুল হত্যা মামলার আরো দুই আসামী সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের মতিয়ার রহমান ফনে ও মোক্তার হোসেন পলাতক রয়েছেন। বাকী ৫ আসামী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের ফারুক হোসেন ওরফে ফারুনের ছেলে আকিমুল ইসলাম, একই উপজেলার বোড়াই গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে মিজানুর রহমান, আসাননগর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে ফারুক হোসেন, একই গ্রামের নবীছদ্দিনের ছেলে আব্বাস উদ্দীন ও আবুল কাসেম কারাগারে আছেন। আসামী ডালিমের দেশ ত্যাগের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ডিএসবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ হোসেন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তিনি কর্মস্থলে নতুন যোগদান করেছেন। তাই কি ভাবে ডালিম পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়েছেন তাও তিনি বলতে পারবেন না। উল্লেখ ২০১৮ সালে ১৮ আগস্ট সন্ধ্যা রাতে ঝিনাইদহের বংকিরা পশ্চিমপাড়া এলাকার হাফিজ উদ্দীনের দুই ছেলে সাইফুল ইসলাম সাইফ (সেনাসদস্য) ও মনিরুল ইসলাম (নৌ সদস্য) মটরসাইকেলযোগে স্থানীয় বদরগঞ্জ বাজার থেকে ঈদের রাতে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা বংকিরা গ্রামের হাওনঘানা নামক স্থানে পৌঁছালে রাস্তার ওপর গাছ ফেলে ডাকাতরা ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তারা মোটরসাইকেল থেকে নেমে চিৎকার করলে ডাকাত দলের এক সেনা সদস্য সাইফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরদিন নিহতের পিতা হাফিজুর রহমান হাবু অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম উল্লেখ করে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেন। ২০১৯ সালের ৩০ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঝিনাইদাহ থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মহসীন হোসেন ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ২০ জন সাক্ষির সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে খুলনা বিভাগীয় দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত ৮ জনেরই মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করে রায় প্রদান করেন। নিহত হওয়ার সময় সেনাসদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সেনানিবাসের মেডিকেল কোরের ল্যান্স কর্পোরাল হিসেবে চাকরিরত ছিলেন।
৬ views