সৌদি আরবের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। নামাজের জামাতে এ বিষয়ে সমস্ত মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রতিটি মসজিদকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, ইসলামের পাঠ দেওয়ার নামে বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করছে তাবলিগ। সে কারণেই তাদের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক রাখা যাবে না। দাওয়া গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও একই ফতোয়া জারি করা হয়েছে।একশ বছর আগে ভারতে প্রথম তৈরি হয়েছিল তাবলিগ জামাত। করোনাকালে দিল্লিতে করোনাবিধি উপেক্ষা করে সভার আয়োজন করে তারা বিপুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। একশ বছর আগে মহম্মদ ইলিয়াস কান্দলাবি যখন তাবলিগ তৈরি করেছিলেন, তখনো গোষ্ঠীটিকে নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। ইলিয়াসের বক্তব্য ছিল, বিশুদ্ধ ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই কাজ করবে সংগঠনটি। বস্তুত, এখনো গ্রামে গ্রামে ঘুরে সে কাজই করে তাবলিগ। কীভাবে আদর্শ মুসলিম হয়ে উঠতে হবে, তার পাঠ দেওয়া হয়।দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাবলিগের প্রভাব যথেষ্ট। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় তাবলিগের শক্তিশালী সংগঠন আছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তাবলিগের মূল টাকা আসে আরব থেকে। ফলে সৌদিতে তাবলিগ নিষিদ্ধ হলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তাদের টাকায় টান পড়বে এবং সংগঠনটির স্বাভাবিক মৃত্যু হবে।সাংবাদিক এবং ইসলাম বিষয়ক গবেষক জাভেদ আখতারের বক্তব্য, সৌদি আরবে তাবলিগ নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। তাবলিগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের প্রশাসন খোঁজখবর রাখছে। করোনার সময় দিল্লিতে তাদের অনুষ্ঠানের পর প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় সরকার তাবলিগের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছিল। ভারত এবার সৌদি আরবকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তাবলিগের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।জাভেদের মতে, ''ওয়াহাবিদের সঙ্গে তাবলিগের বরাবরই বিরোধ ছিল। সৌদিতে ওয়াহাবিদের গুরুত্ব বেশি। তাদেরই চাপে সরকার তাবলিগকে নিষিদ্ধ করেছে।'' কিন্তু ভারতে তাবলিগ নিয়ে যখন বিতর্ক হয়েছিল তখন ওয়াহাবিরা তাবলিগের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এবার সৌদির কথা মেনে তারাও তাবলিগের বিরোধিতা করে কি না, সেটাই দেখার।বস্তুত, এখনই এ বিষয়ে মত প্রকাশ করতে চাইছেন না ভারতের ইসলামিক পণ্ডিতরা। সৌদি কেন এ কাজ করল, তার প্রতিফলন কী হবে, এই বিষয়গুলির দিকে তারা নজর রাখতে চাইছেন। ডিডাব্লিউকে অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিস মোশাওয়ারাতের প্রধান নাভেদ হামিদ বলেছেন, ''সৌদির বিবৃতিটি এখনো খুব স্পষ্ট নয়। তারা তাবলিগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে, নাকি স্থানীয় স্তরে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে, এ বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে না। যার থেকে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।'' নাভেদের বক্তব্য, ওয়াহাবিদের সঙ্গে তাবলিগের ইসলামিক ভাবনার তফাত আছে। কিন্তু তাই বলে একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হবে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে এর প্রভাব ভারতে পড়বে বলে তিনি মনে করেন না। তাবলিগকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন জিয়া উস সালাম। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মতো কোনো কাজ তাবলিগ করে না। তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগ তৈরি করা অনুচিত। সৌদির মতো রাষ্ট্র এ কাজ করলে অবাক লাগে।''ডিডাব্লিউ ভারতের তাবলিগ নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে ইসলামিক স্কলারদের একাংশের বক্তব্য, সৌদির টাকা বন্ধ হয়ে গেলে তাবলিগের মতো এত বড় সংগঠনকে সচল রাখা কঠিন। সৌদি নিষিদ্ধ করার ফলে অন্য দেশের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনও তাবলিগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলে তারা মনে করছেন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]