হেরে গেলেও অনেক যদি-কিন্তু মিলিয়ে সুযোগ থাকবে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর সামনে। তবে জিতে গেলে চতুর্থ দল হিসেবে প্লে-অফের টিকিট পাওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবে তারা। তাদের এ মিশনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। তাদের জোড়া ফিফটিতে ভর করে চট্টগ্রাম দাঁড় করিয়েছে ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি। রাজশাহীকে ম্যাচ জিততে করতে হবে ১৭৬ রান।
রাজশাহী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর আমন্ত্রণে আগে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ১৪.৫ ওভারে ১২২ রান করে ফেলেছিলেন সৌম্য ও লিটন। দুজনই হাঁকান ব্যক্তিগত ফিফটি। এ উদ্বোধনী জুটির তেমন ফায়দা নিতে পারেনি চট্টগ্রামের মিডলঅর্ডার। তবে শেষ দুই ওভারে রেজাউর রহমান রাজা ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চট্টগ্রামের ইনিংস পৌঁছে যায় ৪ উইকেটে ১৭৫ রানে।
অবশ্য ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই বেঁচে যান সৌম্য। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের করা প্রথম ওভারের শেষ বলে আউটসাইড এজে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন সৌম্য। সেটি ঠিকঠাক ধরলেও আবেদন করেননি নুরুল হাসান সোহান কিংবা দলের অন্য কেউ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাটের কানায় বেশ ভালোভাবেই লেগেছিল সেটি। প্রথম ওভারেই এমনভাবে বেঁচে যাওয়ার পর আর সুযোগ দেননি সৌম্য।
রাজশাহীর দুই স্পিনার শেখ মেহেদি হাসান ও আরাফাত সানির ওপর চড়াও হন শুরু থেকেই। অপরপ্রান্তে লিটনের ব্যাটে ছিল শিল্পের ছোঁয়া। সৌম্য হাঁকাচ্ছিলেন আগ্রাসী ছক্কা আর দৃষ্টিনন্দন শটে গড়িয়ে সীমানাছাড়া করছিলেন লিটন। ইনিংসের সেরা শট ছিল মেহেদির ফ্লাইট দেয়া মিডলস্ট্যাম্পের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে সোজা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে এক ড্রপে পাঠিয়ে দেন সীমানার ওপারে।
তবে লিটনের ইনিংসটিও ছিল জীবন পাওয়া। ব্যক্তিগত ২২ রানের সময় রেজাউর রাজার বলে পয়েন্টে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন ফজলে রাব্বি। ক্যাচটি অবশ্য বেশ কঠিনই ছিল, পুরো শরীর বাড়িয়ে ডাইভ দিয়েও হাতে রাখতে পারেননি ফজলে রাব্বি। পরে আবার ব্যক্তিগত ৪০ রানের সময় ফিল্ডারের ভুলে নিশ্চিত রানআউটের হাত থেকে বেঁচে যান লিটন। জীবন পেয়ে ফিফটি হাঁকান সৌম্য-লিটন দুজনই।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে ব্যক্তিগত পঞ্চাশে পৌঁছান সৌম্য, পরের ওভারে চলতি আসরে নিজের তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন লিটন। পঞ্চাশে পৌঁছে ৪০ বল খেলেন সৌম্য, হাঁকান ২ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা। অন্যদিকে ৩৮ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ফিফটি করেন লিটন। ব্যক্তিগত মাইলফলকের পাশাপাশি জুটিতেও শতরান যোগ করে ফেলেন এ দুজন, ১২ ওভারে ঠিক ১০০ রান হয় চট্টগ্রামের।
জুটি ভাঙার আশায় ১৩তম ওভারে প্রথমবারের মতো ডানহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার আনিসুল ইসলাম ইমনকে আক্রমণে আনেন রাজশাহী অধিনায়ক। নিজের প্রথম ওভারে ৬ রান খরচ করেন ইমন, দ্বিতীয় ওভারে সৌম্যর কাছে হজম করেন ছক্কা। তবে ছক্কার পরের বলেই দারুণ এক স্লোয়ারে সৌম্যকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান ইমন, ভেঙে দেন উদ্বোধনী জুটি। দলীয় ১২২ রানে সাজঘরে ফেরার সময় সৌম্যর নামের পাশে ছিল ৪৮ বলে ৩ চার ও ৪ ছয়ের মারে ৬৩ রানের ইনিংস। আগের ম্যাচে ৬২ রান করেছিলেন সৌম্য।
ওপেনিং সঙ্গীকে হারানোর পর লিটনও যেতে পারেননি বেশিদূর। রেজাউর রাজার করা ১৬তম ওভারে স্কুপ করতে গিয়ে সোজা বোল্ড হয়ে যান ৪৩ বলে ৫৫ রান করা লিটন। দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে যেন উজ্জীবিত হয় রাজশাহী। টাইমআউটের পর ১৭তম ওভারের প্রথম বলে চট্টগ্রাম অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনকে (৩ বলে ২) নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন ইমন, সেই ওভারে মাত্র ৪ রান নিতে পারে চট্টগ্রাম। ডেথে বোলিং করতে এসে মোসাদ্দেক সৈকতের (৪ বলে ৩) উইকেট নেন সাইফউদ্দিন।
প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১৫ রান দিলেও নিজের শেষ ওভারে গড়বড় করে ফেলেন রেজাউর রহমান রাজা। দুইটি বিমারে নো বলসহ শামসুর রহমান শুভর কাছে ছক্কা হজম করেন তিনটি। সেই ওভারে মাত্র ৩ বল করে ২৩ রান দেন তিনি। দুই বিমারের কারণে আর বোলিং করতে পারেননি সেই ওভারে। তার বাকি থাকা তিন বল করেন আনিসুল ইমন। এই তিন বলে এক ওয়াইডে মাত্র ১ রানই দেন ইমন। সবমিলিয়ে ৩.৩ ওভারে মাত্র ২১ রান খরচায় ২ উইকেট নেন তিনি। যা তার কুড়ি ওভারের ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার।
শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনও করেন বিমার। সেই বলে ছক্কা হাঁকান জিয়াউর রহমান। এছাড়া আরও দুইটি ওয়াইড বল করেন তিনি। সবমিলিয়ে সেই ওভারে আসে ১৩ রান। জিয়াউর ৭ বলে ১০ ও শামসুর ১৮ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]