শিরোমণি ডেস্ক :এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। বিভিন্ন সময় বিদেশ ভ্রমণে নারীরা ছিলেন তার নিত্যসঙ্গী।
আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে পিকের বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
১৬ পৃষ্ঠার ওই জবানবন্দিতে অবন্তিকা তার সঙ্গে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পিকে হালদারের অবৈধ সম্পর্কের কথা তুল ধরেন। পিকে হালদারের সঙ্গে অপর বান্ধবীদের অবৈধ সম্পর্কের তথ্যও প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে পিকে হালদারের আর্থিক অপকর্মের পৃষ্ঠপোষকদের নামও প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া দেশের টাকা পাচার করে পিকে হালদার কানাডায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন বলেও স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করা হয়। মঙ্গলবার অবন্তিকার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদ-উর-রহমান। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার আসামি অবন্তিকা। বর্তমানে পিকে বিদেশে পলাতক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
জবানবন্দিতে অবন্তিকা বড়াল বলেন, আমার (অবন্তিকা) বাবা ছিলেন সরকারের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। ২০০৬ সালে তিনি যখন মারা যান, তখন আমি ঢাকা ইডেন কলেজে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। এ অবস্থায় পেনশনের টাকা না পেয়ে আমরা পুরো পরিবার খুব অসহায় পরিস্থিতিতে পড়ে যাই। পরে ইডেন কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করে ২০১০ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে ফ্রন্টডেস্ক অফিসার হিসেবে চাকরি নিই। সেই প্রতিষ্ঠানের এমডি ছিলেন পিকে হালদার। এরপরই পিকে হালদারের নজর পরে আমার দিকে। বিভিন্ন সময় শারীরিক সম্পর্ক গড়ার প্রস্তাব দেন তিনি। আমি প্রথমদিকে রাজি হইনি। এক পর্যায়ে ছোট দুই বোনের পড়ালেখা ও বৃদ্ধ মায়ের অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে আমি তার প্রস্তাবে রাজি হই। এতে সে আমাকে বিভিন্ন সময় আর্থিকভাবে সহায়তা করতে থাকে। এভাবে আমার সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক চলতে থাকে। একপর্যায়ে মানসিক তাড়নায় আমি সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে চলে আসি। পরিবারের কথা চিন্তা করে আরেকটি চাকরি খুঁজতে থাকি। ২০১৪ সালে আমি পিপলস লিজিংয়ে চাকরিতে যোগদান করি।
তিনি বলেন, পিকে হালদার আমার পরিবারকে দেখাশোনা করতেন। এরই মধ্যে ধানমন্ডিতে আমাকে একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন। তিনি আমার নামে যেসব সম্পদ কিনেছেন, সেগুলোর দলিলে আমি শুধু সই করেছি। ধানমন্ডির ওই ফ্ল্যাটে দুই বোন ও মাকে নিয়ে আমি বসবাস করি। এ ফ্ল্যাটে পিকে হালদার আসতেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন সময় আমি বিদেশ ভ্রমণ করেছি। স্বামী-স্ত্রীর মতোই আমরা থাকতাম। কিন্তু আমাদের বিয়ে হয়নি। পিকে হালদার আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তবে বিভিন্ন সময় বিয়ের জন্য চাপ দিলেও তিনি আমার কথায় কোনো কর্ণপাত করেননি। বিয়ের কথা বললে পিকে হালদার আমার পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি দেন। পিকে হালদারের ঢাকার মাওয়া, পূর্বাঞ্চলের জমি, উত্তরার জমিসহ কানাডায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার তথ্যও স্বীকারোক্তিতে প্রকাশ করেন অবন্তিকা।
তিনি আরও বলেন, আরেক বান্ধবী নাহিদা রুনাইয়ের নামে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন পিকে হালদার। তার সঙ্গেও বিয়ে বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক ছিল পিকে হালদারের। তাকে নিয়েও বিভিন্ন সময় বিদেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি। এছাড়া আরও বিভিন্ন নারীর সঙ্গে পিকে হালদারের শারীরিক সম্পর্ক ছিল। পিকে হালদার অত্যন্ত চৌকস। আমি (অবন্তিকা) তার থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করেও এ পথ থেকে ফিরে আসতে পারিনি। এমন কাজে আমি অনুতপ্ত।
অবন্তিকা আরও বলেন, পিকে হালদারের আর্থিক নানা অনিয়মের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পিকে হালদার তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।
গত ১৩ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে অবন্তিকাকে গ্রেফতার করে দুদক। এরপর ওইদিনই বিকালে অবন্তিকার প্রথম দফায় তিন দিনের এবং গত ৪ মার্চ দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
গত ৮ জানুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল। এরও আগে গত ৫ জানুয়ারি পিকে হালদারের মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। গত ২ ডিসেম্বর পিকে হালদারকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা জারির আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ।
পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে বছরের শুরুতেই পিকে হালদার বিদেশে পালান। এরপর চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় দুই দফায় পিকে হালদারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ দেন আদালত। এ মামলায় অবন্তিকা বড়ালের আগে তিন আসামি উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা সবাই কারাগারে।