হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি। গত ১৬ই নভেম্বর বিকাল অনুমান ০৩.০০ ঘটিকার সময় বানিয়াচং থানার মক্রমপুর হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার পাশে জলাশয়ে বানিয়াচং থানা পুলিশ উক্ত মাদ্রাসার ছাত্র আকরাম খান (০৯) এর হাত-পা বাধা লাশ উদ্ধার করে। লাশ পাওয়ার পর অফিসার ইনচার্জ জনাব অজয় চন্দ্র দেব এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়েন। একপর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে ভিকটিম আকরাম খান এর নিকট ০১ টি চাবি আছে। সে চাবি দিয়ে এতিমখানার অনেক ছেলের ট্রাংক খোলা যেত। তাই মাদ্রাসার কারো কোন কিছু চুরি হলেই সকলে আকরাম’কে সন্দেহ করতো। বিষয়টি অফিসার ইনচার্জ জনাব অজয় চন্দ্র দেব আমলে নেন এবং উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে উক্ত মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তালার চাবিই খুলে দেয় আকরাম খান হত্যার রহস্য। পরবর্তীতে পুলিশ আকরাম খান হত্যায় জড়িত মাদ্রাসার ছাত্র, ফখরুল মিয়া(১৬), পিতা-মস্তু মিয়া, মোঃ ফয়েজ উদ্দীন(১৩), পিতা-মোঃ জুলহাস মিয়া, মোঃ জাহেদ মিয়া(১৫), পিতা-মহিবুর রহমান, সর্বসাং-মক্রমপুর, থানা-বানিয়াচং, জেলা-হবিগঞ্জ’দেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে উক্ত ছাত্ররা স্বীকার করে আকরাম হত্যার কিছুদিন পূর্বে ফখরুল মিয়ার মাদ্রাসার বোর্ডিংয়ের ট্রাংক হতে প্রথমে ৬০/-টাকা ও পরে ৫০/-টাকা চুরি হয়। উক্ত টাকা খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ফখরুল মিয়া, জাহেদ মিয়া ও ফয়েজ উদ্দীন জানতে পারে আকরাম খানের নিকট একটি তালা খোলার চাবি আছে যা দিয়ে অধিকাংশ ছাত্রের ট্রাংকের তালা খোলা যায়। ইহাতে উক্ত ছাত্রদের সন্দেহ হয় আকরাম খান তার টাকা চুরি করেছে । উক্ত বিষয় নিয়ে ফখরুল মিয়া, জাহেদ মিয়া ও ফয়েজ উদ্দীনদের মনে আকরাম খানের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং আকরাম খানকে সুযোগ পেলে শিক্ষা দিবে বলে পরিকল্পনা করে। গত ১৬ই নভেম্বর প্রতিদিনের ন্যায় আকরাম খান(৯) সহ অন্যান্য শিশুরা ফজরের আজানের আগে ঘুম থেকে উঠে কোরআন পাঠ করে পড়াশুনা শেষে সকালের নাস্তা খেয়ে সকাল ১০.০০ ঘটিকার সময়ে এতিমখানার বোর্ডিংয়ে তাদের নিজ নিজ বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে। ফখরুল মিয়া(১৬), মোঃ ফয়েজ উদ্দীন(১৩), মোঃ জাহেদ মিয়া(১৫) প্রতিদিন ভোর বেলা ফজরের নামাজের আগে মাদ্রাসায় চলে আসে এবং রাত্রিবেলা এশার নামাজের পর নিজ নিজ বাড়ীতে চলে যায়। মাদ্রাসার রুটিন অনুযায়ী তারা সকাল ১০.০০ ঘটিকার সময় মসজিদের ভিতর সকলে ঘুমাইয়া পড়িলেও তারা ঘুমানোর ভান করে আকরাম খানকে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ খোঁজতে থাকে। ঐদিন সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় আকরাম খান ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যায়। তখন মাদ্রাসার ছাত্র ফখরুল মিয়া(১৬), ফয়েজ উদ্দীন (১৩)ও জাহেদ মিয়া(১৫) আকরাম খানকে দেখে। এরপর তারা সুযোগ বুজে বাথরুম করার উছিলায় ০৩ জন বাথরুমে যায়। সেখানে গিয়ে ফখরুল মিয়া(১৬) ভিকটিম আকরাম খান(০৯) এর সাথে কথা বলতে বলতে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যার উদ্দেশ্যে মাদ্রাসা সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ফিশারীর (জলাশয়) বাউন্ডারির নিকট লাউ গাছের নিচে নিয়ে যায়। উক্ত স্থানে নিয়া যাওয়ার সময় ফখরুল মিয়া(১৬) মাঠে থাকা নাইলনের রশি হাতে করে নিয়ে যায়। পিছন পিছন ফয়েজ উদ্দীন(১৩) ও জাহেদ মিয়া(১৫)দ্বয় উক্ত স্থানে যায়। লাউ গাছের নিচে যাওয়ার পর তারা আকরাম খান (০৯) কে টাকা চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে ফখরুল মিয়া(১৬) ভিকটিম আকরাম খান (০৯)এর দুই হাত একসাথে করে বাঁধতে চায়। তখন আকরাম খান (০৯) চিৎকার করলে জাহেদ মিয়া(১৩) দুই হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। তারপর ফখরুল মিয়া(১৬) ও ফয়েজ উদ্দীন(১৩) তাকে লাউ গাছের নিচে মাটিতে ফেলে দুই হাত একসাথে করিয়া এবং দুই পা একসাথে করে নাইলনের রশি দিয়ে আলাদা আলাদা বাঁধে। অতঃপর ফখরুল মিয়া (১৬) লাউ গাছের নিচে পড়ে থাকা ইট দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্ব-জোরে মাথার ডান পাশে এবং পেটের ডান পাশে আঘাত করে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। এতেও আকরাম খান(০৯)এর মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় তারা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ০৩ জন মিলে আকরাম খান (০৯) কে ধরাধরি করে পার্শ্ববর্তী ফিশারীতে (জলাশয়) নেমে তথায় থাকা একটি নৌকা সংলগ্ন পানিতে উপুড় করে ফেলে দেয় এবং ফখরুল মিয়া(১৬) ভিকটিমের মাথায় ধরে চুবাইতে থাকে। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ভিকটিমকে নৌকা সংলগ্ন পানিতে ফেলে লাশ গোপন করে চুপিসারে মসজিদের ভিতর এসে পূণরায় ঘুমানোর ভান করে শুইয়ে থাকে। পরবর্তীতে আকরাম খান (০৯) কে খুজিয়ে পাওয়া না গেলে উপরোক্ত ফখরুল মিয়া(১৬), মোঃ ফয়েজ উদ্দীন(১৩), মোঃ জাহেদ মিয়া(১৫) ভিকটিমকে খোঁজে বের করার অজুহাতে নৌকা সেচ করার জন্য উক্ত স্থানে যায় এবং ভিকটিমের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ তারা ০৩ জন মিলেই উদ্ধার করে। উল্লেখিত মাদ্রাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করা হয়েছে ।