মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। এর মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন রোগীরা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কই বেশি। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যাসংকট। ফলে মেঝে ও বারান্দায় থেকে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।এদিকে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে। শুধু ডিসেম্বর মাসেই হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা পেতেও নানা দুর্ভোগের অভিযোগ রোগীদের। রোগীর চাপ থাকায় শয্যাসংকট, সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ নানা অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় থেকে জানা যায়, শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা মাত্র ৫৯টি। অথচ প্রতিদিন সেখানে রোগী ভর্তি হচ্ছে শতাধিক। ফলে দেখা দিচ্ছে শয্যাসংকট।শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি শিশুরা প্রায় সবাই ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগী। যাদের বেশির ভাগই হাওর ও প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা।হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে অনেক শিশু রোগীকে মেজেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালের মেঝে ও বিছানাগুলোও ছিল অপরিচ্ছন্ন। যেখানে-সেখানে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা, থুতু, পানের পিক। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে নোংরা পরিবেশের কারণে উল্টো আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা।হবিগঞ্জ শহরের কামড়াপুর এলাকার ফারজানা আক্তার তার চার মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তিনি জানান, চার দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু ঠিক সময় চিকিৎসক, নার্স শিশুটিকে দেখতে আসেন না। কোনো প্রয়োজনে নার্সদের ডাকলে তাঁরা দুর্ব্যবহার করেন।বাহুবল উপজেলার মিরপুর এলাকার ইউসুফ আলী তাঁর পাঁচ মাসের বাচ্চাকে ভর্তি করিয়েছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ খুবই খারাপ। এ ছাড়া নার্সরা ঠিক সময় চিকিৎসা দেন না। রোগীর কোনো সমস্যা হলে নার্সদের কাছে গিয়ে সহযোগিতা পাওয়া যায় না, উল্টো তাঁরা দুর্ব্যবহার করেন। এ ছাড়া এখানকার যে পরিবেশ, তা একটা গোয়ালঘরের চেয়েও খারাপ।ময়না গোমেজ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তিন মাসের শিশুকে চার দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালের পরিবেশ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই নারী বলেন, এটা দেখে কোনো হাসপাতাল মনে হয় না। চারপাশ নোংরা হয়ে আছে। শয্যাগুলোতে চাদর নেই। দাগ আর ময়লা হয়ে আছে। হাসপাতালের মেঝেতেও ময়লা-আবর্জনা।তিনি আরও বলেন, এখানে শিশুদের যে পরিবেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তাতে শিশুরা আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা ৫৯টি। অথচ এখানে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে অনেক রোগীকেই মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে মেঝেতে থাকা রোগীদের জন্য আমরা আলাদা শয্যার ব্যবস্থা রেখেছি।’নোংরা পরিবেশ বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিদিন হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়, কিন্তু রোগীর স্বজনেরাই সেখানে পানের পিক আর বিভিন্ন খাবারের অতিরিক্ত জিনিস ফেলে ময়লা করে রাখেন। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আমরা আরও সতর্ক রয়েছি। তবে ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে মা-বাবা ও পরিবারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]