ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মশিউর রহমান জোয়ারদারকে, জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। রবিবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে বারটার দিকে তার নিজ বাস ভবন উপজেলার শিতলী পাড়া নামক স্থানে এ সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করে বলেন, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই মহদয়ের সাথে শনিবার দুপুর ৩ টার দিকে নৌকা প্রতিকের পক্ষে ভোট প্রচারনা করছিলাম। প্রচারনা শেষে সভাপতি মহদয় ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে রউনা করার কিছুক্ষন পর ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি যে, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগ আমাকে এবং হরিনাকুন্ডু উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অদ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান হরিনাকুন্ডু পৌরসভার মেয়র মোঃ শাহিনুর রহমান রিন্টুকে সাময়িক বহিষ্কার করেন। যাহা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী।
তিনি বলেন, আমি ১৯৬৮ সালে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৬৯ সালের গন অভ্যুত্থানের পূর্বে রাষ্ট্রদ্রোহী ও অগ্নি সংযোগের কারনে দীর্ঘ ৬ মাস হাজত বাস করি। এছাড়াও ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের পক্ষে জোর প্রচারনা চালাই। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন করি। ১৯৮৯ সালে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব কামরুজ্জামানের হাত ধরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদান করি। এবং ১৯৯৩ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হই। এবং ২০০৩ সালে হরিনাকুন্ডু উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হই। এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পর পর দুইবার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। যার মধ্যে একবার নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হই। তিনি বলেন, আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনও দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান করিনি এবং বিন্দু মাত্র কোন দুর্নীতির সাথে আপোষ করিনি।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আমাকে নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন দেন। যে নির্বাচনে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর প্রত্যক্ষ মদদে আমার বিপক্ষে সতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর হুসাইন নির্বাচনে অংশ নেন। এবং তার পক্ষে সরাসরি প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিএনপি জামায়াতের সাথে ষড়যন্ত্র করে নৌকা প্রতীককে পরাজিত করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করে বলেন, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নির্বাচনে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। এবং ঝিনাইদহ জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং কোন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহন করেননি।
তিনি বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হবার পর হরিনাকুন্ডু পৌর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে ২৮শে ডিসেম্বর বেলা ১ঃ০০ টার সময় একটি মানব্বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানব্বন্ধনে আমিসহ আওয়ামীলীগের ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত মানব্বন্ধনে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার অনুরোধ জানায়। কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়ায় আমরা বর্তমান প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান গ্রহন করি এবং ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের নির্দেশ মোতাবেক গত ০৭-০১-২০২১ তারিখে হরিনাকুন্ডু উপজেলা আওয়ামীলীগ ও পৌর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ-২ আসনের এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আমি মোঃ মশিউর রহমান জোয়ারদার সভাপতিত্ব করি এবং ১১-০১-২০২১ তারিখ হইতে পৌর নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবার পর থেকে প্রতিনিয়ত পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এমতাবস্থায় জেলা আওয়ামীলীগ সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে আমাকে বহিষ্কার করেন যা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংবিধান বহির্ভূত বলে আমি মনে করি। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট সুবিচার কামনা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে হরিনাকুন্ডু উপজেলার জোড়াদাহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান মালিথা, হরিনাকুন্ডু থানা যুবলীগের আহ্বায়ক আশরাফুল হক, দৌলতপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ সাব্দার রহমান, হরিনাকুন্ডু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম, বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সাংবাদিক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।