গাজীপুর প্রতিনিধি:রাকিব হাসান আকন্দ :ঢাকার আশুলিয়ায় স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি আশরাফুল আহসান জিতুকে ওরফে ‘জিতু দাদাকে’ গ্রেফতার করেছে র্যাব। জিতু সাভারের আশুলিয়া এলাকার উজ্জ্বল আজীর ছেলে। বুধবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের সিদ্দিক মুন্সির বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঘটনার কিছুদিন আগে ওই স্কুলের এক ছাত্রীর সাথে জিতুকে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে শিক্ষক উৎপল জিতুকে অবগত করে। এ ঘটনায় সে ওই শিক্ষকের প্র্রতি ক্ষুব্ধ হয়। ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোয়িজম প্রদর্শন করার জন্য শিক্ষকের উপর হামলার পরিকল্পনা করে জিতু। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রিকেট খেলার স্টাম্প স্কুলে নিয়ে এসে শ্রেণিকক্ষের পিছনে লুকিয়ে রেখে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে আঘাত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোনে একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। পরে জিতুর কাছে থাকা ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পেছন থেকে অতর্কিতভাবে শিক্ষককে আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ২৭ জুন (সোমবার) ভোরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক মারা যায়।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল জিতু। সে স্কুলে সবার কাছে একজন উশৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে এবং স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিংও বিরক্ত করত। সকলের সামনে স্কুলে ধূমপান, ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত। তার নেতৃত্বে এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করত। তার বিরুদ্ধে পরিবারের কাছে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার কিশোর গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের উপর চড়াও হতো। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ে দলবেঁধে শোডাউন দিত।
ঘটনার দিন জিতু ওরফে জিতু দাদা এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ত্যাগ করে। সে প্রথমে বাসযোগে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতে থাকে। পরদিন সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরীঘাটে পৌঁছায় এবং ট্রলারযোগে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলা তার এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপণ করে। পরদিন ভোরে সে আবারও তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য আতাইকুলা থেকে বাসযোগে কাজিরহাট ল টার্মিনালে এসে ল যোগে আরিচাঘাট পৌঁছায় এবং সেখান থেকে বাসযোগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া গ্রামে তার বন্ধুর ভাড়া বাসায় আত্মগোপনে থাকে।