লংগদু, রাঙামাটি:পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে শীতের শেষে প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যায়। বেশ কিছু অংশে জেগে ওঠে ছোটবড় চর। সেখানে স্থানীয়রা চাষাবাদ করেন। এবারও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় চাষাবাদ শুরু করেছেন তারা। বাতাসে দোল খাচ্ছে রোপণ করা কচি ধানের পাতা ও সতেজ শাকসবজি। স্থানীয়দের ভাষায় এ জেগে ওঠা চর ‘জলেভাসা’ জমি নামে পরিচিত।
সরেজমিনে কাপ্তাই হ্রদের অববাহিকায় অবস্থিত লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলা সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হ্রদের ভেতরে বোরো ধানের সবুজ আবরণে ছেয়ে গেছে। এ যেন সবুজের সঙ্গে হ্রদ-পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি। পাশাপাশি বোরো ধানের চারা লাগাতেও দেখা গেছে এবং বিভিন্ন মৌসুমে ফল ও শাকসবজি চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের কেউ কেউ হ্রদের পাশে জেগে ওঠা ছোটবড় চর চাষের উপযোগী করে তুলছেন, আবার কেউ কেউ রোপণকৃত জমিতে সেচ দিচ্ছেন।
গত কয়েক বছর যাবৎ হ্রদে শুষ্ক মৌসুমে জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের ফোরেরমূখ এলাকার আব্দুল ফজল। তিনি জানান, ভরা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি শুকিয়ে যায়, তখন মাছ ধরতে না পারায় আয় কমে যায়। তাই শুষ্ক মৌসুমের কয়েক মাস তাকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এরপর মাছ ধরার পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু করে দেন। এভাবে পার হয়েছে এক দশকের বেশি সময়। এতে সংসারেও সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
হ্রদের জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করেন- রমিজ মিয়া, সৈয়দ আলী, টনিকলেট চাকমাসহ অনেকে। তারা জানান, শুষ্ক মৌসুমে জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রতিবছর জমিতে পলি পড়ায় নরম হয়ে যায়। লাঙ্গল দিয়ে চাষ করা ছাড়াই ধানের চারা রোপণ করা যায়। সার, ওষুধ ও কীটনাশক সহ এতে পরিশ্রম যেমন কম হয়, তেমনি ফলনও ভালো হয়। আর খরচের সাশ্রয় তো আছেই।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, চাষাবাদে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করেন। অবসর সময় তারা এখানে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করেন। কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে খরচ কিছুটা বেড়েছে। আর শঙ্কার বিষয়, নির্দিষ্ট সময়ের আগে হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এদিকে হ্রদের জমিতে চাষাবাদে সহযোগিতা করে আসছে কৃষি বিভাগ। প্রণোদনার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
লংগদু উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী জানান, জলেভাসা জমিতে চাষাবাদে কৃষি বিভাগ থেকে ধানের পাশাপাশি সরিষা, ভুট্টা, সূর্যমুখীর বীজ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়। পাশাপাশি সারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামও কৃষকদের দেওয়া হয়। প্রতিবছর বোরো মৌসুমে উপজেলায় জলেভাসা ৬০-৭০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়ে থাকে। সাথে উপযোগী বিভিন্ন ফল ও শাকসবজিও চাষাবাদ হয়। প্রতিবারই ফলন ভালো হয়। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এবারও ফসল ভালো হবে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]