তিনজন ২.৩৭ মিটার উঁচুতে লাফ দিয়েছিলেন। কিন্তু সোনা জিতলেন মাত্র দুজন। কাতারের মুতাজ ঈসা বারশিম ও ইতালির জিয়ানমারকো তামবেরিই জিতলেন সোনা। সমান উচ্চতা লাফালেও আগের চেষ্টায় অন্য দুজনের মতো ভালো না করায় সোনা পেলেন না বেলারুশের মাকসিম নেদাসেকাউ।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, সোনা কীভাবে দুজন পেতে পারেন? এখানেই রচিত হয়েছে ইতিহাস।
ঈসা বারশিম ও তামবেরি ২.৩৭ মিটার উঁচুতে লাফ দিলেও আটকে গেছেন ২.৩৯ মিটার লাফ দিতে গিয়ে। তা–ও আবার দুজনই আটকে গেছেন তিনবার করে। দুজনকে কোনোভাবেই আলাদা করা যাচ্ছিল না। দুজনের কেউই ফাউল করেননি। ফলে সোনার দাবি নিয়ে আসেন দুজনই।
এমন অবস্থায় ট্র্যাকে এসে অলিম্পিকের এক কর্মকর্তা তাঁদের প্রস্তাব দেন ফুটবলে টাইব্রেকের মতো ‘জাম্প অফ’-এর, ‘তোমরা চাইলে আমরা জাম্প অফের ব্যবস্থা করতে পারি।’ অন্তত একটা কিছুর ভিত্তিতে হলেও দুজনকে আলাদা করা হয়। আর এখানেই সবার মন জিতে নিয়েছেন ঈসা বারশিম।
তাৎক্ষণিকভাবে সেই কর্মকর্তাকে ঈসা বারশিম জিজ্ঞেস করেন, ‘আমরা দুজন কি দুটি সোনার পদক পেতে পারি না?’ ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, তামবেরির সঙ্গে সোনার পদক ভাগাভাগি করে নিতে কোনোই সমস্যা নেই তাঁর। ঈসা হয়তো ভেবেছিলেন, তিনি যেমন চার বছর ধরে রক্ত পানি করা পরিশ্রমে এই সাফল্য পেয়েছেন, তামবেরিরও তো তা–ই! তামবেরির সোনা জেতার যোগ্যতা থাকলে শুধু ‘জাম্প অফের’ ওপর ভিত্তি করে তাঁকে রুপা দিতে হবে কেন? সোনার আনন্দ ছুঁয়ে যাক তাঁকেও!
দুজন ব্যাপারটা নিয়ে একবারও কথা বলেননি, আলোচনা করেননি। কিন্তু ঈসা বারশিম বুঝেছিলেন তামবেরির মনের বার্তা। বুঝেছিলেন, অলিম্পিকে সোনার পদক একজন অ্যাথলেটের কাছে কেমন আরাধ্য বিষয়!
‘হ্যাঁ, এটাও সম্ভব’, সেই কর্মকর্তার মুখ থেকে এই জবাব শোনার পরই উল্লাসে মেতে ওঠেন ঈসা বারশিম ও তামবেরি। দুজন কোলাকুলি করে সাফল্য উদ্যাপন করা শুরু করেন। আর এর মধ্যেই নিশ্চিত হয়ে যায়, ১১৩ বছর পর অলিম্পিকে সোনা জয়ের গৌরব ভাগাভাগি হচ্ছে।
ঈসা বারশিমের সঙ্গে তামবেরির বন্ধুত্ব যে এই ঘটনার পরই হলো, তা কিন্তু নয়। দুজন দুজনকে অনেক আগে থেকেই চিনতেন। একই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য দুজনের মধ্যে একটা বন্ধনও গড়ে উঠেছিল। গত অলিম্পিকের পর গোড়ালির চোটে পড়েছিলেন তামবেরি, যা প্রায় তাঁর ক্যারিয়ারকেই শেষ করে দিচ্ছিল। তা–ও কোনোভাবে প্যারিসের ডায়মন্ড লিগে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
কিন্তু সেখানেই বিধি বাম। ঠিকমতো লাফই দিতে পারছিলেন না। মনের জোরও পাচ্ছিলেন না, আত্মবিশ্বাস হারাতে বসেছিলেন। প্রতিযোগিতার পর সরাসরি নিজের ঘরে গিয়ে মন খারাপ করে বসে ছিলেন। তামবেরির মনের মধ্যে যে ঝড় বইছে, সেটা অন্য অ্যাথলেটরা না বুঝতে পারলেও বুঝেছিলেন ঈসা বারশিম।
পরদিন এই মুসা বারশিমই সাহস জুগিয়েছিলেন তামবেরিকে। তামবেরির ঘরে গিয়ে কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘দেখো, তুমি ঠিক পথেই আছ। মাত্র একটা বড় চোট থেকে ফিরেছ। কেউ ভেবেছিল, তুমি ওই চোটের পর ডায়মন্ড লিগে আসতে পারবে? কিন্তু তুমি এসেছ। একেবারে তাড়াতাড়ি সবকিছু চেয়ো না। যা হচ্ছে, আস্তে আস্তে হতে থাকুক। ঠিকই একসময় নিজের সেরাটা দিতে পারবে।’
তামবেরিকে আজকের এই অবস্থানে আনার পেছনে তাই বারশিমের ভূমিকা অনেক বেশি। আর অমন যদি হয় বন্ধুত্বের জোর, তাহলে কী হয়, সেটা তো গতকালই দেখল বিশ্ব!