দৈনিক শিরোমণি ডেস্ক:দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এতে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও পঠন-পাঠন দিন দিন কমছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন বিভাগে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করা হচ্ছে। চিকিৎসা, প্রকৌশল বিদ্যার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও ব্যবসায় অনুষদের বিষয়ভিত্তিক বইগুলো ইংরেজিতে লেখা। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম এবং পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন ইংরেজি মাধ্যমে হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। কলা অনুষদে কিছু বিষয় বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হলেও সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদে ঠিকই শিক্ষার্থীদের ওপর ইংরেজির খক্ষ চাপানো হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানে প্রায় শতভাগ ইংরেজি পাঠ্যক্রমে পড়ানো হয়। লেখাপড়া বাজারমুখী কাঠামোর কারণে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যেন অনেকটাই নির্বাসনে। সাধারণত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ভাষাকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ ঘটে বেশি। অথচ উচ্চশিক্ষায় দিন দিন বাংলার চর্চা কমছে। বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইংরেজিতে। কার্যত উচ্চশিক্ষায় বড় সংকটে রয়েছে মাতৃভাষা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি সেই রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরে পদার্পণ পথে থাকলেও আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা ভাষা উপেক্ষিত।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, মাতৃভাষার জন্য ১৯৫২ সালে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত এবং আরও কয়েক জন। ভাষার আন্দোলনই বাংলাদেশ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। যে দেশে মায়ের ভাষা রক্ষায় এত ত্যাগ, সে দেশেই পিছিয়ে পড়ছে বাংলা ভাষা। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাভাষা ব্যবহারের এই উপেক্ষা শুধু প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকদের নয়। এ দায় রাষ্ট্রের, সরকারের। তবে দেশে উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষায় বইয়ের সংকট রয়েছে। ইংরেজিতে লেখা বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করার জন্য অনুবাদক দেশে অপ্রতুল। দেশে ভালো অনুবাদক তৈরি করা, শিক্ষায় বাংলা ভাষা ব্যাপক হারে প্রচলন, প্রসারণের জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। অথচ আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে নির্বিকার ও নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছেন। বাংলায় রচিত ও অনুদিত বইয়ের সংখ্যা বাড়লে উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহারও বাড়বে। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে এর বিকল্পও নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫টি। এসবের ৩৮টিই মেডিকেল, কৃষি, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, যেগুলোর বেশির ভাগেই বাংলা পড়ানো হয় না। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৫টি। সেখানে বাংলার চর্চা নেই বললেই চলে। সেখানে পরীক্ষাও বাংলায় দেওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি ১১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র সাতটির নাম বাংলায়। বাকি ১০৮টির নাম ইংরেজিতে। এছাড়া দেশের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতেও বাংলার ব্যবহার নামমাত্র।