১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটের সিদ্ধান্ত হলেও বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ভোট করা সম্ভব হবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। ইভিএম কেনার প্রকল্প সরকার অনুমোদন করে কি না, তার ওপর বিষয়টি নির্ভর করবে। যথার্থ মনে না করলে সরকার এই প্রকল্প অনুমোদন না-ও দিতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি।ইতিমধ্যে ২ লাখ ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে ইসি। যেটি অনুমোদন হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ভোট হবে। প্রকল্প অনুমোদন না হলে ইসির হাতে যে পরিমাণ ইভিএম আছে সেটি দিয়ে ৭০-৭৫টি আসনে ইভিএমে ভোট করা যাবে।
ব্যালট বা ইভিএমের চেয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই বর্তমান কমিশনের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সিইসি বলেন, আমরা যেটা চাচ্ছি, ইভিএম বা ব্যালট মূল কথা নয়। মূল কথা হলো—সবাইকে চেষ্টা করতে হবে একটা সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ, নির্বিঘ্ন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। ঐ নির্বাচনে ইভিএম থাকল, না কি ব্যালট থাকল—সেটা বড় কথা নয়।
বর্তমান কমিশন বিচার-বিশ্লেষণ ও মতামত নিয়ে ইভিএম সম্পর্কে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সিইসি। তিনি বলেন, আমরা এসেই কিন্তু ইভিএমকে সমর্থন করিনি। আমাদের তরফ থেকে ইভিএম নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করেছি। আমাদের ছয় মাস হয়েছে। আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন প্রক্রিয়া-পদ্ধতিতে ইভিএম যন্ত্রটাকে বোঝার চেষ্টা করেছি। ব্যাপক আলোচনা করেছি। ব্যাপক অংশগ্রহণও হয়েছে। এর মাধ্যমে ম্যানিপুলেশন (কারচুপি) হয়—এমন কেউ দেখাতে পারেনি, বলতে পারেনি। এখন প্রকাশ্যে সবাই বলছেন, অন্তত ইভিএম দিয়ে হ্যাকিং সম্ভব নয়। এই ধারণাও আগে ছিল না। কিন্তু এখন হয়েছে।
সিইসি বলেন, আমরা ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের নেতাদের বলেছি, আপনারা আপনাদের কাজ করেন। আমরা আপনাদের কোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে পারব না। এটা সম্ভব নয়। ওনারও আমাদের বলেছেন, আপনারা ইভিএম নিয়ে কোনো প্রচারণা করছেন না। আমরা বলেছি এটা আমরা দেখব।
সিইসি বলেন, তারা (ফোরামের নেতারা) একটা বিষয়ে বলতে চেয়েছেন আমাদের এখানে হয়তো বিদেশি ডিপ্লোমেটরা আসেন। তারা জানতে চেয়েছেন ডিপ্লোমেটরা আমাদের প্রভাবিত করেন কি না? আমি বলেছি তারা ডিপ্লোম্যাট। তারা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত। নির্বাচন নিয়ে প্রভাবিত করার মতো কোনো কথা কখনো বলেননি এবং বলবেনও না। তারা অনেক সময় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কোনো সহায়তা লাগবে কি না, জানতে চান। তবে আমরা এখনো তাদের এ ধরনের কোনো প্রস্তাব দেইনি। সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, আমরা সব সময় বলছি আপনারা নির্বাচনে আসুন, অংশগ্রহণ করুন। নির্বাচনকে ফলপ্রসূ করুন। যাতে নির্বাচনটা সুন্দর হয় এবং জনমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
ইএমএফের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলীর নেতৃত্বে সংগঠনটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়। আবেদ আলী বলেন, ইএমএফ সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছে। আমরা ইভিএমের পজিটিভ দিকগুলো তুলে ধরার জন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে যাব। এতে আপনাদের স্বার্থটা কী—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের স্বার্থের জায়গা গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার। আমরা মনে করছি, ইভিএমে ভোট ভালো হবে।
সংগঠনের পরিচালক ও ডুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা টেকনিক্যাল পার্সন হিসেবে দেখছি ইভিএমে ম্যানিপুলেশন করার সুযোগ নেই। এই জায়গায় জনগণ হিসেবে আমার স্বার্থ আছে।
আপনাদের প্রচারণার বাজেট কে দিচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে ইলেকশন মনিটরিং করা। এটা সম্পূর্ণ এনজিও। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই কাজটা করে আসছি। আমরা বিভিন্ন নির্বাচনে মনিটরিং করেছি। এটা আগামী নির্বাচনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]