আনিছুর রহমান(রলিন,)মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও বৃহৎ সাপ্তাহিক হাট গোয়ালিমান্দ্রা হাট।লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত এ হাটটি দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এক সময় এটি মূলত গবাদি পশুর হাট হিসেবে খ্যাত ছিল,
তবে বর্তমানে এটি বহুমুখী বাজারে পরিণত হয়েছে, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে কৃষিজ পণ্য, মাছ, মাংস, পোশাক, তৈজসপত্রসহ নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যায়।
গোয়ালিমান্দ্রা হাটে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাওয়া যায়, যা স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
কৃষিজ ও খাদ্যপণ্য: ধান, চাল, গম, ডাল, শাক-সবজি (লাউ, পটল, বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচ, আলু), ফলমূল (আম, কলা, পেঁপে, নারকেল, কাঁঠাল), মসলা (পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ)।
গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি: ছাগল, ভেড়া, কবুতর, গবাদি পশুর খাদ্য ও সরঞ্জাম।
মৎস্যজাত পণ্য: নদীর টাটকা মাছ (রুই, কাতলা, বোয়াল, শিং, মাগুর, টেংরা), চিংড়ি, ইলিশ, শুটকি মাছ।
পোশাক ও তৈজসপত্র: স্থানীয় তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, বাঁশের ঝুড়ি, চালুনি, কাঠ ও লোহার তৈজসপত্র, কৃষিকাজের সরঞ্জাম (কোদাল, দা, বেলচা, নাঙল)।
ঐতিহ্যবাহী খাবার: বিক্রমপুরের ছেকারুটি, আমিত্তি, চিড়া-মুড়ি, মিষ্টান্ন (রসগোল্লা, সন্দেশ, মুরকি), হাঁস ও মুরগির ডিম।
হাটের পূর্বের জৌলুস বনাম বর্তমান অবস্থা
এক সময় গোয়ালিমান্দ্রা হাট সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জমজমাট থাকত। মাইলের পর মাইল দূর থেকেও হাটের কোলাহল শোনা যেত।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ও ক্রেতারা এখানে আসতেন। বিশেষত বর্ষার সময় বরিশাল ও ফরিদপুরের ব্যবসায়ীরা খালপথে নৌকা ও লঞ্চযোগে মালামাল নিয়ে আসতেন। তবে বর্তমানে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌপথে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে পাইকারদের আনাগোনা অনেক কমে গেছে।
হাটের ইজারা মূল্য ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
গত বছর গোয়ালিমান্দ্রা হাটের সর্বোচ্চ ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দরপত্র দাখিল হয়েছিল। কিন্তু এ বছর ৭০ লাখ টাকা দরপত্র দাখিল হয়েছে, যা ইজারা মূল্যে বিশাল বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই বাড়তি ইজারার চাপ শেষ পর্যন্ত সাধারণ ক্রেতার ওপরই এসে পড়বে।
হাটের বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া খাজনা সম্পর্কে জানা যায়:
ছাগলের বাজারে শতকরা ৬ টাকা হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
হাঁস-মুরগির বাজারে পাইকাররা ৬-৭ টাকা শতাংশ হারে খাজনা পরিশোধ করছেন।
কাঠের বাজারে দোকানদাররা চটি প্রতি ৩ শত টাকা ভাড়া পরিশোধ করছেন।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ইজারাদাররা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করলে তা তাদের লাভের পরিমাণ কমিয়ে দেবে, ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং ক্রেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।
হাটের ভবিষ্যৎ ও স্থানীয়দের উদ্বেগ
এলাকার মুরুব্বিরা আশঙ্কা করছেন, হাটের ইজারা মূল্য এভাবে বাড়তে থাকলে এটি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত ক্রেতা ও পাইকাররা আসা কমিয়ে দেবেন, যা হাটের ঐতিহ্য ও নামডাক নষ্ট করবে।
এছাড়া অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন, যা সামগ্রিকভাবে স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
স্থানীয়রা চান, সরকার ও প্রশাসন যেন এই ঐতিহ্যবাহী হাটের গৌরব বজায় রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয় এবং ব্যবসায়ীদের ওপর অযৌক্তিক চাপ না দেয়। নতুবা, ২০০ বছরের পুরনো এই হাট একসময় তার পূর্বের জৌলুস হারিয়ে ফেলবে।
২০০ বছরের পুরনো গোয়ালিমান্দ্রা হাট এখনও লৌহজং উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে টিকে আছে। তবে নৌপথ বন্ধ হওয়া ও ইজারা মূল্যের ঊর্ধ্বগতি হাটের চিরচেনা রূপকে কিছুটা বদলে দিয়েছে। যথাযথ পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক নজরদারির মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী হাটের গৌরব পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]