৪৯২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বুধবার (১ ফেব্রয়ারি) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৬ষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটির অনুমোদনের জন্য মোট পাঁচটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি, স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের একটি প্রস্তাব ছিল, প্রস্তাবটি কিছু সংশোধনের পরে এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদিত চারটি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৪৯২ কোটি ৪৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭৭ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৭৮ কোটি ৫২ লাখ ৬ হাজার ২৫০ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংক ঋণ ৪১৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬৭ হাজার ২২৭ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত তথ্য জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী।’
পরে অতিরিক্তক সচিব বলেন, ‘ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (উই কেয়ার)’- এ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকার আটটি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) ইস্যু করা হলে সাতটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তাদের মধ্যে ছয়টি প্রস্তাব কারিগরিভাবে গ্রহণযোগ্য হয়।’
পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ডিওএইচডব্লিউএ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড কোরিয়া এবং ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড, বাংলাদেশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৯ কোটি ৭৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৪০ টাকা।
সভায় দেশের কৃষিখাতের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ধরনের ৮৫ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির পৃথক তিনটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৩২ কোটি ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৭ টাকা।
তিন ক্রয় প্রস্তাবের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানি করা হবে। বিএডিসির সঙ্গে ২০২০ সালে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তসমূহ অভিন্ন রেখে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর তারিখে আবার চুক্তি নবায়ন করা হয়। সার আমদানি চুক্তিতে উল্লেখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে মরক্কো থেকে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন টিএসপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সর্বমোট দুই কোটি ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১৮২ কোটি ছয় লাখ দুা হাজার ৮৭৫ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন টিএসপি সারের দাম পড়বে ৭০৫.২৫ মার্কিন ডলার।
এছাড়াও চট্রগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড (টিএসপিসিএল)-এর জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) রক ফসফেট (৭২% বিপিএল মিনিমাম) আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টিএসপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল রক ফসফেট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২৫ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) রক ফসফেট আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উম্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি দরপত্র জমা পড়ে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী: মেসার্স উইলসন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং পিভিটি লি. সিঙ্গাপুর) থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট আমদানি করতে ব্যয় হবে ৯১ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৮ কোটি ৫২ লাখ ৬ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন রক ফসফেট এর দাম পড়বে ৩৬৫ মার্কিন ডলার।
সভায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ১২তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি করা হয়। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১২তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে ১২তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৬ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭২ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮১২ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৬৬৬.৮৭৫ মার্কিন ডলার।