সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে কৃষি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় জনবল সংকটের কারণে কৃষিঋণসহ অন্যান্য ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ৩০টি শাখা ব্যাংক রয়েছে। প্রতিটি শাখাতে জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। জেলায় মোট কৃষক রয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার। প্রতি ৭৪০০ জন কৃষকের জন্য মাত্র একজন ঋণদান কর্মকর্তা রয়েছেন। সুনামগঞ্জ মুখ্য আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সব মিলিয়ে ব্যাংকে পদ রয়েছে ৩৫৯টি। কিন্তু এসব পদের বিপরীতে মাত্র ১৯৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। বিশেষ করে কর্মকর্তা পর্যায়ে ১৯০ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১০২ জন। ৫০ জন কর্মকর্তা ৩০টি শাখায় ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় কৃষি ঋণ ও কৃষি শিল্প ভিত্তিক ঋণ বিতরণ করে হাওরে এলাকার মানুষের জীবন মানের ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব। বোরো ফসল ছাড়াও জেলায় মাছ চাষ, হাসের খামার, পোল্ট্রি শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। জনবল সংকট দূর করে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করা গেলে অসংখ্য মানুষ ক্ষুদ্র ব্যবসা, সবজি চাষসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে পরিবারের দারিদ্র বিমোচন করতে পারবেন। কৃষি ব্যাংকের জনবল সংকটের কারণে এনজিওদের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি লাভবান হচ্ছে হাওর এলাকায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কৃষি ব্যাংকের জনবল সংকট দূর করতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুনামগঞ্জের স্থানীয় লোকদের এসব শাখায় নিয়োগ করতে হবে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, তার ইউনিয়নে কালে ভদ্রে ঋণ দান কর্মকর্তা যান। বোরো মৌসুমে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলে ঋণদান কর্মকর্তাকে খুঁজে বের করতে হয়।
ধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী সুহেল বলেন, উত্তর সুরমা এলাকায় ৫০ হাজার কৃষক শীতকালীন সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কৃষকদের অনেকেই প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য ঋণদান কর্মকর্তার দেখা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মহাজনী সুদে ঋণ গ্রহণ করেন।
বিশ্বম্ভরপুর কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অদ্বৈত্য চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার শাখায় জনবলের সংকট রয়েছে। ৩ জস কর্মী দিয়ে ৫টি ইউনিয়নের কৃষকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করছেন। ঋণ গ্রহীতার পরিমাণ বেশি হওয়ায় প্রতিদিন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন জেলায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কৃষক রয়েছেন। এবছর ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সাড়ে দশ হাজার হেক্টর জমির বীজতলা তৈরি কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষিঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা হলে আগামীতে বোরো বাম্পার ফলন হবে।
সুনামগঞ্জ মুখ্য আঞ্চলিক কার্যলয়ের মুখ্য ব্যবস্থাপক রাজীব চন্দ্র সাহা বলেন, লোকবল সংকটের কারণে ঋণদান কার্যক্রম কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় কৃষিভিত্তিক ঋণ দিয়ে বিপুল সংখ্যক উদ্যোগক্তা তৈরি করা সম্ভব কিন্তু জনবল সংকটের কারণে তা করা যাচ্ছে না। প্রতিটি শাখায় জনবল সংকট দীর্ঘদিন ধরে চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে এখন ব্যাংকে তরুণ প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল কর্মকর্তাগন মাঠেঘাটে কাজ করে যাচ্ছেন। পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করা হলে পুরো হাওর এলাকায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করা সম্ভব।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]