আব্দুল হালিম, যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ হেমন্তের নবান্ন উৎসবের পর ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা অর্জনের বিজয় দিবস এরপর ইংরেজী নববর্ষ। এমনি একের পর এক বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বন। তাই বছরজুড়ে থাকে ফুলের নানান চাহিদা। এবার ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব ১লা ফাল্গুন। করোনার প্রভাবে ব্যাপক মন্দা সত্তেও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নিয়ে আশাবাদী বাঙালী। একই সাথে প্রচন্ড আশাবাদী বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীর ফুলচাষীরা। আসন্ন বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের রাজধানীর ফুল সারাদেশে সুবাস ছড়ানোর আশা। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে গদখালীর ফুল হাটে ৬/৭ দিন আগের থেকেই প্রতিদিন ছয় থেকে সাত কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হচ্ছে। ফুল ব্যবসায়ীদের দাবি, ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ১০ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কমপে ১৩ থেকে ১৫ কোটি টাকার বেচাকেনা হচ্ছে। এবার ফুলচাষীদের ফুল বিক্রির টার্গেট ঝাড়া ৫০ কোটি টাকা। এছাড়া বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আরও অন্তত ২৫/৩০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হবে। ফুলচাষীরা জানান, চলতি মৌসুমে গদখালী এলাকায় সাত হাজার কৃষক প্রায় ১হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন। গদখালী এলাকার মাঠের যে প্রান্তে চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। হরেক রঙা ফুলে গদখালি কেন্দ্রিক কয়েকটি গ্রাম এখন অপরূপ সৌন্দর্য্যরে প্রাকৃতিক জাগতিক নন্দকানন।
চাষিরা জানান, আসন্ন তিন দিবস (বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) ঘিরে ফুল কেটে বাজারে নিয়ে আসা এবং পরিচর্যায় মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠ জুড়ে হরেক বিভিন্ন সাইজের গোলাপ, টিউলিপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ফুল প্রকৃতির শোভা বৃদ্ধি করছে।
স্থানীয় ফুলচাষিরা জানান, বাংলাদেশে ফুলের চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ৭০ শতাংশ ফুল যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা কমপে ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন। প্রতিবছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসসহ ফেব্রয়ারি মাসের তিনটি বিশেষ দিনকে টার্গেট করে ফুলের বাজার ধরতে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকেই চাষিরা ফুল কেটে জমি থেকে বাজারে নিয়ে আসছেন। এসব ফুল ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বগুড়া, খুলনাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন। বাজার ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিপিস গোলাপ ৭ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধার প্রতিস্টিক ৮ থেকে ১০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতি পিস ৫ থেকে ১২ টাকা, জারবেরা ৬ থেকে ১০ টাকা ও গাঁদা ফুল প্রতি হাজার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গদখালী ফুলচাষি সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ ও মহান ভাষা দিবস ঘিরে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ দিবস গুলোতে অন্তত ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট করেছেন ফুল উৎপাদক তৃণমূলের চাষিরা। এরই মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ফুল ক্রেতারা গদখালী ফুল হাটে এসে ফুল কিনছেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি চলবে পুরোদমে বেচাকেনা। এরইমধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি উপল্েয চাষিরা বায়নার টাকা নিয়েছেন।
দেশের একমাত্র পাইকারি ফুলের এ হাটে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে আসেন। ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক ফুল চাষ। অন্য যে কোনো ফসলের তুলনায় ফুল চাষ অধিক লাভজনক। স্থানীয় পুটপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে গোলাপ কিংবা গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করতে খরচ হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এরপর চারা গাছে একবার ফুল ধরলে তা কমপে ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ফুল দেয়। এতে বছরে কমপে ২ লাখ টাকা আয় আসে। ফুল চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক।
১৯৮৩ সালের দিকে স্থানীয় হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক ফুল চাষ শুরু করলে তাদের সাফল্য দেখে অনেকেই ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৯৫ সাল থেকে অধিকাংশ কৃষক ফুল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় সাত হাজার কৃষক আয়ের উৎস হিসেবে ফুল চাষকে বেছে নিয়েছেন। যেসব কৃষক গত ১০ বছর আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুই মুঠো ভাত জোগাড় করতেও হিমশিম খেয়েছেন। ফুল চাষের মাধ্যমে তারা এখন আর্থিক সাবলম্বী হয়েছেন। প্রত্যেকেই পাকা বাড়ি করেছেন। ঘুচেছে সংসারের অভাব অনটন। সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই ফুলের রাজধানি খ্যাত যশোরের গদখালি ও শার্শা থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে গদখালির ফুল এখন যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দণি কোরিয়ায়।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]