1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : বরিশাল ব্যুরো প্রধান : বরিশাল ব্যুরো প্রধান
  3. [email protected] : cmlbru :
  4. [email protected] : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান
  5. [email protected] : ঢাকা ব্যুরো প্রধান : ঢাকা ব্যুরো প্রধান
  6. [email protected] : স্টাফ রিপোর্টারঃ : স্টাফ রিপোর্টারঃ
  7. [email protected] : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান
  8. [email protected] : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান
  9. [email protected] : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান
  10. [email protected] : আমজাদ হোসেন রাজশাহী ব্যুরো প্রধান : রাজশাহী ব্যুরো প্রধান
  11. [email protected] : রংপুর ব্যুরো প্রধান : রংপুর ব্যুরো প্রধান
  12. [email protected] : রুবেল আহমেদ : রুবেল আহমেদ
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন

নওগাঁয় পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর জবই বিল

রাশেদুজ্জামান, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
  • আপডেট : বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
রাশেদুজ্জামান, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি ঃউত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁর সাপাহার উপজেলার এক বিশাল প্রাকৃতিক জলাভূমি জবই বিল। ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের পুণর্ভবা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এই বিল। প্রায় ২ হাজার হেক্টর আয়তনের এই বিলে প্রতি বছরের মতো এবারেও সাইবেরিয়াসহ বিশ্বের শীতপ্রধান নানা দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির দল আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে পরিযায়ী পাখিদের কলরবে সকাল থেকে সন্ধা অবধি মুখরিত হয়ে উঠেছে বিলের চারপাশ। তা দেখতে নিয়মিত ভীড় জমাচ্ছেন নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। বিলটির একটি অংশ বিশেষ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ হিসেবে ঘোষণার দাবী জানিয়েছেন পাখি প্রেমীরা।
জানা যায়, নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে সাপাহার উপজেলার শিরন্টি, গোয়ালা, আইহাই ও পাতাড়ী ইউনিয়নের ডুমরইল, বোরা মির্জাপুর, মাহিল, কালিন্দার এবং ভুতকুড়িসহ ৫টি বিলের সমন্বয়ে গঠিত জবই বিল। বিলটি জবই গ্রামের কাছাকাছি উৎপত্তি হয়ে ভারত সীমান্তে প্রবেশ করে পুণর্ভবা নদীতে গিয়ে পড়েছে। জবই গ্রামের কাছাকাছি হওয়ায় লোকমুখে এর নাম “জবই বিল” হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় সারা বছর প্রাণ-প্রকৃতিতে মুখরিত থাকলেও শীতকালে বদলে যায় এই বিলের পরিবেশ। সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নানা প্রজাতির পাখ-পাখালির ডাকে ভিন্ন প্রাণের সারি হয় বিলটিতে। দেশীয় নানা জাতের মাছে ভরপুর এই বিলে নভেম্বর থেকে ফেব্রয়ারী মাস পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে চায় পাখির দল। বিলটি বর্তমানে খাস জমি হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের অধীনে আছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে বর্ষা মৌসুমে এর আয়তন প্রায় ২ হাজার হেক্টর এবং শুকনো মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর। তবে সরকারি হিসাবে এই বিলের আয়তন ৪০৩ হেক্টর।
সম্প্রতি জবই বিল ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশায় মোড়ানো সকালে চারিদিকে যখন শুনশান নীরবতা ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় পরিযায়ী পাখিদের ওড়াওড়ি। বিলজুড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি অবস্থান নেয় পাখির দল। এই সময়ে চারিদিকে পাখির কলরবে মুখরিত থাকে। এসব পাখিকে পাতিসরালি, ভূতিহাঁস, শামুকখোল, চখাচখি বলে ডাকেন স্থানীয়রা। প্রায় ২৮ প্রজাতির দেশী ও পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি পাওয়া যায় এই বিলে। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও পানকৌড়ি, পাকৌড়ি, ছন্নিহাঁস, বকের দেখা মেলে বিলজুড়ে। দূর থেকে এসব পাখির দলকে দেখতে হাঁস বলে মনে হলেও কাছে গেলে সেই ভুল ভাঙে দর্শনার্থীদের। মানুষের উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই দলবেঁধে আকাশে উড়াল দেয় পাখিরা। পরিযায়ী ও দেশীয় পাখি দেখতে প্রতিদিন এই বিলে ভীড় জমান শত শত দর্শনার্থী ও পাখি প্রেমীরা। বিলের সৌন্দর্য উপভোগে দর্শনার্থীদের আরো আকর্ষিত করতে বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নান্দনিক উদ্যোগ।
জবই বিলে ডিএসএলআর ক্যামেরায় পাখিদের ছবি তুলছিলেন কাজী ইসতেখার আহম্মেদ। ঢাকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৭ম পর্বে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থী বলেন, এ্যাপেক্স কোম্পানীতে বাবার চাকুরীর সুবাদে নওগাঁয় মাধ্যমিক অবধি ২ বছর থাকার সুযোগ হয়েছিল। সীমান্ত পাবলিক স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় এই বিলে পরিযায়ী পাখিদের বিচরনের অনেক গল্প শুনেছি। কিন্তু বাবার বগুড়ায় বদলী হওয়ায় কখনো আসার সুযোগ হয়নি। প্রায় ৭ বছর পর নওগাঁয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। হাতে সময় ছিলো তাই পাখিদের জল কলরব শুনতে এবং নানা প্রজাতির পাখি দেখতে চলে এলাম। পাখির ছবি তুলতে অনেক ভালো লাগছে।
পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলা সদর থেকে আসা দর্শনার্থী মিম খাতুন বলেন, সাপাহারে মামার বাড়ি হওয়ার সুবাদে ৩ বছর আগেও জবই বিল দেখতে এসেছিলাম। তখনকার চেয়ে বিলের বর্তমান চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। আগে এখানে পাখি দেখতে আসলে বসার জন্য কোন জায়গা ছিলো না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখতে হতো। আর এখন বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কে অসংখ্য বে  স্থাপন করা হয়েছে। এখানে আসার পর প্রচুর পরিমাণে পাতি সরালি ও শামুক খোল পাখি দেখলাম। কাছে গেলেই পাখিগুলো উড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পাখিদের কলকাকলি শুনলে মনে একটা প্রশান্তি কাজ করে।
নওগাঁ শহরের পৌরসভা এলাকার মৃধাপাড়া থেকে বড় বোনের সঙ্গে এসেছেন নবব শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী মালিহা তাবাসসুম। তিনি বলেন, জবই বিলের কথা অনেকের মুখে শুনেছি। কখনো আসা হয়নি। পরীক্ষা শেষে শীতকালীন লম্বা ছুটিতে সময় হয়েছে, তাই দেখতে চলে আসলাম। দুপুরে কিছুটা কুঁয়াশায় ঢাকা থাকলেও বিকেলে দলবেঁধে পাখিগুলো বসে থাকার দৃশ্য স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। পাখিদের বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
সাপাহার উপজেলা সদরের বাসিন্দা মোনেম শাহরিয়ার নবাব বলেন, বর্তমান ইউএনও’র নান্দনিক উদ্যোগে জবই বিলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে দর্শনার্থীরা এলে পাখির ছবি ছাড়া তেমন আর কোন ছবিই তুলতে পারতো না। বসে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থাও ছিলো না। এখানে জবই বিল লেখা পয়েন্ট স্থাপনসহ দৃষ্টিনন্দন বসার জায়গা করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ইউএনও’র এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় বলে মনে করেন তিনি।
জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান বলেন, বিলের উত্তরে ভারতের পূনর্ভবা নদী থাকার পাশাপাশি অনেকগুলো বড় বড় জলাশয় আছে। এই নদী, জলাশয় এবং জবই বিলের মধ্যে দিয়ে ভারতের বন থেকে আসা পাখিদের চলাচলের একটি চ্যানেল তৈরি হয়েছে। আশির দশকে এই বিলটি পরিত্যক্ত ছিলো। তখন পুরো বিল কচুরিপানায় পরিপূর্ণ থাকার কারণে চাষাবাদ হতো না। লাখ লাখ পরিযায়ী পাখি ওই পথে আসতো। এরপর যখন কৃষিতে বিপ্লব ঘটতে শুরু করলো পাখিদের বিচরনও কমতে থাকলো।
তিনি বলেন, পাখিদের আবাসস্থল রক্ষা এবং নিরাপদ বিচরনে ২০১৮ সাল থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ৫২ জন সদস্যের প্রচেষ্টায় বর্তমানে বিলকে শিকারিমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাৎসরিক পাখি জরিপ নিয়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। তাই এবছর জরিপ সুষ্ঠুভাবে করাটাও সম্ভব হয়নি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার প্রায় ২৫ হাজার পরিযায়ী পাখি বিলে এসেছে। মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে প্রতিবছর শীতকালে দুই মাস এই বিলে মাছ ধরা উন্মুক্ত করে দেয়ায় জেলেদের কারণে পাখিদের বিচরন বাঁধাগ্রস্ত হয়। এভাবে মাছ ধরা অব্যাহত রাখলে আগামীতে এই বিলে পরিযায়ী পাখিরা আসা বন্ধ করে দিতে পারে। সংকটটি নিরসনে এই বিলে বন বিভাগের অধীনে থাকা ভুতকুড়ি অংশকে “জীববৈচিত্র সংরক্ষণ অ ল” হিসেবে ঘোষণার দাবী জানান তিনি। এতে বিলের পাখি রক্ষার পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রায় মা মাছ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।
সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, জবই বিল থেকে আহোরনকৃত দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সুস্বাদু হওয়ায় এর সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। হাজার হাজার জেলেদের জীবিকার একমাত্র উৎস এই বিল। এই বিলে মাছ ধরার সময় পরিযায়ী পাখিদের বিচরনে কিছুটা সমস্যা হয় এটা সঠিক। তবে পরিযায়ী পাখিদের উপস্থিতির পাশাপাশি শীতকালে মাছ আহোরনও জরুরী। বিলের একটি অংশকে পাখিদের জন্য সংরক্ষণা করার বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখি দেখতে, পাখির ছবি তুলতে এবং বর্ষা মৌসুমে নৌ-ভ্রমন করতে নওগাঁসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা আসেন জবই বিলে। তাই এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিল কেন্দ্রীক পর্যটন বিকশিত হলে জবই বিলের ওপর নির্ভরশীল জেলেদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে। সার্বিক দিক বিবেচনায় জবই বিল কেন্দ্রীক পর্যটন আকর্ষণ বৃদ্ধি করার লক্ষে ইতিমধ্যে দৃষ্টিনন্দন বসার জায়গা স্থাপনসহ জবই বিল পয়েন্ট তৈরী করা হয়েছে। আগামীতে পর্যটকদের কাছে এই বিলকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে নানান কর্মপরিকল্পনা গ্রহনের প্রস্তুতি চলছে।
Facebook Comments
৯ views

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২২ দৈনিক শিরোমনি