সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি’র) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কাজী মজিবর রহমান মজিব। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ও বাঘাইছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র মো: আলমগীর কবির, রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, সহ- সভাপতি কাজী জালোয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, ব্যবসায়ী নেতা মো: কামাল উদ্দিন, পিসিসিপি রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখার আহ্বায়ক মো: শহিদুল ইসলাম, সদস্য সচিব রাজু আহম্মেদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী মজিবর রহমান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলকে অনগ্রসর অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, চাকরি, উচ্চশিক্ষা বৃত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা রকম কোটা ও সুযোগ-সুবিধা চালু করেছে সরকার। তবে একই এলাকায় বসবাস করে বর্তমানে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী গুলো থেকেও পিছিয়ে পড়া এবং জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের চেয়েও বেশী হয়েও তা পাচ্ছে না বাঙালিরা।
ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মধ্যে শুধুমাত্র চাকমারা পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট জনগোষ্ঠীর ২৭% আর সারাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর থেকে ১% এর কম হয়েও চাকমা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার ৭৪% আর সারা বাংলাদেশের শিক্ষার হার ৭৩%। তাহলে চাকমারা সারা বাংলাদেশের শিক্ষার হারের চাইতেও তারা এগিয়ে গিয়েছে শুধু মাত্র কোটা সুবিধার কারণে।অন্যদিকে বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট জনগোষ্ঠীর ৫১% হয়েও শিক্ষার হার ২৪%। তাই শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত পক্ষে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হলো অউপজাতি তথা বাঙালিরা। সরকারের উচিত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের মধ্যে যারা এগিয়ে গিয়েছে বেশী তাদের সকল কোটা বাতিল করে বাঙালি সহ অন্যান্য পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র জাতি ম্রো, খেয়াং, চাক, বম, লুসাই, পাংখোয়াদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, কোটা ও চাকরি সুবিধা দেওয়া।
অন্যান্য বক্তরা বলেন, শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হচ্ছে। অবিলম্বে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে জনসংখ্যানুপাতে সকল সুযোগ-সুবিধা বণ্টন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে একজন বাঙালি চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে।
মেডিক্যাল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সকল উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে ১৯৮৪ সাল থেকে। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর কোটার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩২৫ জন উপজাতি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে কোটাতেই। নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে।অন্য দিকে একই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বাঙালিদের জন্য কোটা তো দূরে থাক তেমন কোনো সুযোগ এখনো তৈরি করা হয়নি। পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী দু’টি জনগোষ্ঠীর জন্য দুই রকম নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বক্তরা আরো বলেন, উন্নয়ন বোর্ডের ২০-২১ অর্থ বছরের শিক্ষাবৃত্তিতে পার্বত্য তিন জেলা থেকে বৃত্তি পেয়েছেন ২১৮৩ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে বাঙালি শিক্ষার্থী ৬১০ এবং অবাঙালি তথা বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থী ১৫৮৩ জন। শতকরা হিসাবে দেখা যায় বাঙালি ২৭.৮২% এবং অবাঙালি/উপজাতি শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন ৭২.৫১%। পিছিয়ে পড়া বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। এই বৈষম্যের আমরা তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি।পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চ শিক্ষাবৃত্তিতে বাঙালিরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তাই আগামীতে উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক শিক্ষাবৃত্তি ও চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা অনুপাতে বাঙালি শিক্ষার্থীদের সমান ভাবে দেওয়ার দাবি জানান নেতৃবৃন্দরা।