টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর খাদ্য গুদাম থেকে পাচার হওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ৬৪০ বস্তা চালের মধ্যে ২৮০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) মধ্যরাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ ইশরাত জাহানের উপস্থিতিতে চালসহ ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো-ট ১৪-৬৩৩৯) জব্দ করা হয়। তবে এখনো উদ্ধার হয়নি পাচার হওয়া ৩৬০ বস্তা চাল। এ ঘটনায় রাতেই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ও নৈশ্য প্রহরী আল-আমিনকে আটক করে।
সরজমিনে জানা যায়, ভুঞাপুর খাদ্য গুদাম থেকে দুপুরের দিকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী ১০ টাকা কেজি দরের চাল ট্রাকযোগে পাচার হচ্ছিল। বিষয়টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল আনন্দ টিভির টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি আল আমিন শোভন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহানকে জানান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পাচার হতে যাওয়া চাল বোঝাই একটি ট্রাক দেখতে পান। পরে তিনি বিষয়টি গুদাম কর্মকর্তা মোঃ বেলাল হোসেনের কাছে জানতে চান। গুদাম কর্মকর্তা কোন ধরনের সদুত্তর না দিয়ে নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করেন। তবে গুদাম থেকে সরকারি চাল পাচারের সময় সেখানে সিসি টিভির ক্যামেরাগুলো বন্ধ ছিল। এমনকি সিসিটিভির পাসওয়ার্ডও তার কাছে নেই বলে জানান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ ইসরাত জাহান বিষয়টি থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল ওহাবকে জানালে সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে আসেন এসআই টিটু চৌধুরী। এর ফাঁকে চাল পাচারের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গাবসারা ইউনিয়নের দুইজন ডিলারকে ডেকে এনে গোপনে স্বাক্ষর করিয়ে নেন গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন। কিছুক্ষণ ট্রাকের ছাউনি খোলা হয়। সেখানে ৫০ কেজি প্লাস্টিকের বস্তায় ২৮০ টি বস্তা পাওয়া যায়। পরে সে চাল জব্দ করে ট্রাকসহ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গোপন করেন ৩৬০ বস্তা চাল পাচারের বিষয়টি।
ট্রাক চালক জানান, এর আগেও গুদাম থেকে এক ট্রাক চাল ঘাটাইল নেয়া হয়েছে। গুদামের নৈশ্য প্রহরী আলামিন জানায়, স্যারের (গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন) নির্দেশে প্রথম ট্রাকে ৩৬০ বস্তা ও পরের ট্রাকে ২৮০ বস্তা চাল লেবার দিয়ে লোড করা হয়। ৩৬০ বস্তা নিয়ে ট্রাকটি ঘাটাইলের হামিদপুরে চলে যায়। পরের ট্রাকটি আটকা পড়ে। তবে সর্বমোট ৬৪০ বস্তা চাল লোড করা হয়।
গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, ২৮০ বস্তা চাল গাবসারা ইউনিয়নের ডিলার দিলীপ, ফরহাদ, নজরুল ও অর্জুনা ইউনিয়নের ডিলার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন লেবুর। বাকি ৩৬০ চাল সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান। ওই সময় তিনি উপখাদ্য পরিদর্শকের সাথে অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদে দোকান পরিদর্শনে যান বলে জানান।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা জানান, চালগুলো সোমবার খুলনা থেকে এসেছে। গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন চালগুলো রিসিভ করেছেন। এসব চাল গোডাউনে থাকার কথা। কিভাবে ট্রাকে করে পাচার হচ্ছে তা তিনি জানেননা।
এদিকে এ ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা বাদি হয়ে গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ও নৈশ্য প্রহরী আল-আমিনের বিরুদ্ধে ভূঞাপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ রাতেই তাদের আটক করেছে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহার অভিযোগের ভিত্তিতে গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ও নৈশ্য প্রহরী আল-আমিনকে আটক করা হয়েছে। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হবে। তবে অভিযুক্তরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় মামলাটি দুদকে রেকর্ড হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ ইশরাত জাহান বলেন, সরকারি চাল বিক্রি করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে উপস্থিত হলে ২৮০ বস্তা চালসহ ট্রাক পাওয়া যায়। তবে চালগুলো পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় তোলা ছিল। এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে চাল ও আটককৃত ট্রাক জব্দ করে থানায় পাঠানো হয়েছে।