রেদোয়ান হাসান,সাভার,ঢাক,দৈনিক শিরোমণিঃ
স্বামী ইউসুফ আলী একটি ব্যক্তি মালিকানা ইলেকট্রনিক্স শোরুমের কর্মচারী। স্ত্রী খাদিজা বেগমও ঢাকা রপ্তানী প্রক্রিয়া অঞ্চলের শান্তা লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। চলমান লকডাউনের সময়ও এই দম্পতি সন্তানের সুখের জন্য দিনভর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু হাড় খাটুনীর পর বাসায় ফিরে সেই প্রিয় সন্তানের লাশটাই খুঁজে বের করতে হলো তাদের। প্রতিদিন বাবা-মা বাসায় ফিরলে শিশু সাজ্জাদ হোসেনের ছিলো কত না আবদার। আজ অবুঝ সেই শিশুর নিথর দেহের পাশে বারবার কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা-মা। এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসীও।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় এমনি এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। বুড়ির বাজার এলাকার আব্দুল মান্নান এর মালিকানাধীন ছয় তলা বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এঘটনায় আশুলিয়া থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের প্রতিবেশী আল আমিন ও নাজমুল হোসেনকে আটক করেছে। তারাও পোশাক কারখানার শ্রমিক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত দশ বছর বয়সী সাজ্জাদ হোসেনের বাবা ইউসুফ আলী আশুলিয়ার মিতালী ইলেকট্রনিক্স নামে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন শোরুমের কর্মচারী। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের ভোলা জেলায়। নিহত সাজ্জাদ আশুলিয়ার বুড়ির বাজার এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলো।
নিহত শিশুর মামা সোহেল আহমেদ বলেন, ‘আমরা থাকি পাশে আরেকটা বাড়ির ফ্ল্যাটে। এই জায়গায় আমার বোন-জামাই ওনারা থাকে। আমার বোন চাকরি করে শান্তা গার্মেন্টে। আর বোন জামাই মিতালী শোরুমে অডিটে চাকরি করে। ভাগিনা সাজ্জাদ একাই থাকতো বাসায়। সাড়ে ৩টায় ওর মা বাসায় আইসা দেখে বাইরে দিয়া দরজায় তালা লাগানো। ভাগিনা সাজ্জাদরেও পাওয়া যাইতেছিলো না। তখন ওরা (বোন-জামাই) মনে করছে, হয়ত বাইরে সাজ্জাদ নামাজ পড়তে গেছে না হয় মাদ্রাসায় খেলতে গেছে। চতুর্দিকে অনেক খোঁজখবর নিয়া ওরে পাওয়া যায় নাই। আমাদের কাছেও ফোন দিয়া খোঁজ নিলো। পরে ওর বাবা-মা দরজা খুইলা দেখে যে, শোকেসের দরজা একটু খোলা দেখে সন্দেহ হয়। তখন দেখে টাকা-পয়সা আর গহনা নিয়া গেছে। তখন টয়লেটের ফল ছাদের ডোরটা ওপেন দেখে ওদের আরও সন্দেহ লাগলো। ওই ডোরটা খোলার পরে দেখলো যে লাশটা প্যাকেট করা অবস্থায় আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বোন-জামাইয়ের পাশে আরও দুইটা ফ্ল্যাট আছে। তারা আজ বাসায় ছিলো। যেহেতু ওনারা বাসায় ছিলো যার কারণে আপাতত ওনাদের সন্দেহ করতেছি। কারণ ওনারা বাসায় থাকা অবস্থায় এই ঘটনাটা হইছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহতের বাবা ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমরা দুই জন খোঁজ কইরা বাসায় ঢুকছিলাম সাড়ে ৫টায়। মানে আমরা দুইজনে নিচে খোঁজ করছিলাম। তখন আমার ওয়াইফ ওরে না পেয়ে কানতে কানতে ওপরে ওইঠা তালা খুলে ভিতরে ঢুকছি। রুমের শোকেসটার দরজা ওয়াইফ দেখছে একটু ফাঁকা। ওটা টান দিয়া দেখছে ভিতরে যে টাকা আর গয়না গুলো ছিলো, যে কাপড়রের নিচে ছিলো সে গুলা আউলানো। কাপড় চোপড় গুলা ঘাটাঘাটি করা ছিলো। পরে দেখি যে টয়লেটের উপরে সানসেটের দরজাটা খোলা। ওইটার ভিতরে আমার ছেলেটা শুইয়া রইছে। চুরি হইছে ২০-২৫ হাজার টাকা আর স্বর্ণ ছিলো এক ভরির মতো। খাটের তোশকের নিচে আমার একস্ট্রা চার হাজার টাকা ছিলো ওইটাও নিয়া গেছে। কিন্তু ওইখানে যে আমার ওয়াইফ টাকা রাখছে সেটা আমার ছেলেও জানে না।’
কাউকে সন্দেহ কিংবা অন্য কোন কারণ আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি এই রুমে আড়াই বছর ধরে থাকি। এ পর্যন্ত আমার কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নাই। পাশের রুমের লোকজনও সচরাচর আমাদের রুমে যায়। তারা প্রতিবেশী হিসেবে যাইতেই পারে। কিন্তু কালকে ওনার (নাজমুলের স্ত্রী লতা) ওয়াইফ কোনদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমার বাসায় যাই নাই। তবে কালকে আইসা দেখি উনি (নাজমুলের স্ত্রী) আমার ওয়াইফের সাথে কথা বলতাসে রুমে। আমি ঢোকার পরে উনি আবার রুম থেকে বের হয়ে গেছে। জাস্ট এ পর্যন্তই।’
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘নিজেদের ভাড়াটে ফ্ল্যাট থেকেই ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাবা-মা কর্মস্থলে থাকায় শিশুটি বাসায় একাই থাকতো। শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিশুর পরিবারের অভিযোগ, কিছু টাকা ও স্বর্ণালংকারও খোঁয়া গেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এখনো স্পষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এঘটনায় নিহতের প্রতিবেশী নাজমুল হোসেন ও আল আমিন গাজী নামে দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
২ views