মোঃ রহমত মণ্ডল, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি,দৈনিক শিরোমণিঃ
ইটভাটার সনাতন পদ্ধতিতে ইট বানানোর চেয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে কংক্রিট ব্লক বা বিভিন্ন সাইজের বিকল্প ইট বানানো অনেক সহজ ও পরিবেশবান্ধব। কালো ধোঁয়া, বায়ুদূষণ, ফসল নষ্ট, ক্ষতিগ্রস্থ আবাদি জমি, কাঠ পোড়ানো, স্বাস্থ্য ঝুঁকি ইত্যাদির কোন চিন্তা নেই এই ব্লক ইট উৎপাদনে।রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার খিয়ারজুম্মা বাজারের সেরমস্ত বানিয়াপাড়ায় কৃষি জমির পাশে এই প্রথম গড়ে তোলা হয়েছে ‘এম আর ইকো ব্রিক্স ‘ নামে একটি অত্যাধুনিক ইট তৈরির কারখানা যা সম্পূর্ণ অটোমেটিক। মাসুম আহমেদ নামের ওই তরুণ উদ্যোক্তার অত্যাধুনিক ইট বা ব্লক ক্রয়ের জন্য রংপুর জেলার দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই।কারখানাটি ঘুরে দেখা যায় , শ্রমিকরা কারখানার পাশে পাথর, সিমেন্ট, সিলেকশন সেন্ড ট্রলিতে এনে হপারে ঢেলে দেয়। পরে মিকচার মেশিনে অন্যান্য উপকরণ মিশ্রিত করে কনভেয়ার বেল্টে দিয়ে ভাইব্রো মাল্টি ক্যাভিটি মোল্ডিং মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় এই ইট। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সারি-সারি ভাবে মেশিন থেকে বেড়িয়ে আসে পরিবেশ বান্ধব এই ইট। দৈনিক বিভিন্ন রঙ্গের ১০ হাজার কংক্রিট ইট , ব্লক ও পারকিং টাইলস শ্রমিকরা কারখানার পাশেই সংরক্ষণ করেন বিক্রির জন্য।
ইট তৈরির কারিগর রেজা বলেন, আমরা সর্বোচ্চ ১০ জন শ্রমিক কাজ করি পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া সামাল দিতে। এই প্রযুক্তির প্রতিটি ইকো ব্লক ৩৫ টাকায় (খুচরা হিসেবে) বিক্রি করা হয়। রঙিন ব্লকের দাম ৪০ টাকা। পাইকারি বিক্রিতে ১-২ টাকা কম হতে পারে। এছাড়া কংক্রিট ইট সাধারণ ৯ টাকা ও রঙিন ১০ টাকা , পারকিং টাইলস ২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।উদ্যোক্তা মাসুম আহমেদ বলেন , পোড়া ইটের বিকল্প হিসেবে কংক্রিট ব্লক অনেক বেশি কার্যকর, ব্যয়সাশ্রয়ী, টেকসই। পরিবেশ বান্ধব কনক্রিট ব্লক দিয়ে গাঁথুনিতে সময় যেমন কম লাগে তেমনি সিমেন্ট-বালুও কম লাগে। সাধারণ ইটে প্লাস্টার এর তুলনায় প্লাস্টার পাতলা দিলে চলে, যা অনেক বেশি স্থায়ী হয়। তাছাড়া প্লাস্টার না করলেও চলে। সাধারণ ইটের তুলনায় ওজনে কম হওয়ায় স্থাপনা হয় হালকা। এতে স্থাপনার আয়ু বাড়ে। গরমের সময় রুম থাকে শীতল আর শীতের সময় উষ্ণ।তিনি আরও বলেন, ব্লকের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করবে সেগুলোতে ইটের ব্যবহার বন্ধ করে ব্লক ব্যবহার করা হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যেসব ভবন নির্মিত হবে সেগুলোর দেয়াল ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহার করা হবে। তাই আগামীতে এই ব্লক ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে । আমার মত কেউ যদি আগ্রহী হয় তাহলে সকল সহায়তা আমি দিবো।পরিবেশবান্ধব ইট কি সাশ্রয়ী, জানতে চাইলে এম আর ইকো ব্রিক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন , একটা ব্লক পাঁচটি ইটের সমান। পাশাপাশি এর স্থায়িত্ব বেশি। সবকিছু চিন্তা করলে পুরো ভবন নির্মাণে প্রচলিত ইটের চেয়ে খরচ কম হয়। আর বাংলাদেশের মতো প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ব্লক খুবই মানানসই।
৪১ views