ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,দৈনিক শিরোমণিঃ
কখনো ভ্যান চালক আবার কখনো তাল পাখা তৈরীর কারিগর কলেজ ছাত্র জুয়েল রানা। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ব্যস্ত সময় পার করেন তালপাখা তৈরী করে। এই কাজে তার মা শেফালী বেগম সঙ্গী। পিতৃহীন জুয়েল করোনাকালে ঘরে বসে না থেকে ১৯ হাজার তালপাখা তৈরী করেছেন। ইতিমধ্যে ২ হাজার বিক্রিও হয়েছে। হতদরিদ্র ছেলেটি বাড়িতে তালপাখা তৈরীর পাশাপাশি পিতা মিন্টু সর্দ্দারের রেখে যাওয়া ভ্যান গাড়িটিও চালান। এই দুই মিলিয়ে মাকে নিয়ে তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন। ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪শত টাকা আয় করেন। যা দিয়ে তাদের ৪ জনের সংসার চলে। আর তালপাখা বিক্রির টাকা পড়ালেখার খরচ যোগায়।জুয়েল রানা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পারিয়াট গ্রামের মৃত মিন্টু সর্দ্দারের ছেলে। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া আমেনা খাতুন ডিগ্রি কলেজের ছাত্র। মা শেফালী বেগম জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে জুয়েল নিজেই সংসারের হাল ধরেছেন। সংসারটা বাঁচিয়ে রেখেছেন। তার আয় রোজগারে এখন সংসার চলে। জুয়েল রানা জানান, তাদের গ্রাম পারিয়াটে কমপক্ষে ২০ টি পরিবার পাখা তৈরীর কাজ করেন। তার পিতাও ভ্যান চালানোর পাশাপাশি মৌসুমে পাখা তৈরী করতেন। অভাবের সংসার হওয়ায় ছোট অবস্থায় পড়ালেখার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে বাবার কাজে সহযোগিতা করতে হতো। আর তখনই পাখা তৈরীর কাজ শিখেছেন জুয়েল রানা। কিন্তু কখনও ভাবেননি এই অল্প বয়সে পড়ালেখার সঙ্গে এই কঠিন কাজটিও তাকে করতে হবে। জুয়েল রানা জানান, ২০১৯ সালের ১৫ জুন বাড়িতে পরিচর্জা করার সময় তার বাবা মিন্টু সর্দ্দারকে একটি গরু সিং দিয়ে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি আহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।এরপর থেকে পরিবারের সব দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। জুয়েল রানা তাল পাখা সংগ্রহের দুঃসাধ্য গল্প শোনান। ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে গাছ উঠে তিনিই পাতা কাটেন। বাড়িতে এনে পাখা আকৃতির সাইজ করেন। তার ভাষায় একটি পাখা তৈরী করতে ৮ থেকে ৯ টাকা খরচ হয়। যা বাজারে ১৫ থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি করেন। জুয়েল রানা জানান, তারা তিন ভাই। বড় ভাই রানা ইসলাম (২১) স্যালো ইঞ্জিন ভ্যান (লাটা) চালান। এতে যা পান তা তারই দৈনন্দিন খরচ হয়। আর ছোট ভাই আরাফাত সর্দ্দার (১২) পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। তিনি জানান, পুজি না থাকায় বেশি পাখা তৈরী করতে পারেন না। ৩০ হাজার টাকা পুজি নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি।
৮ views