মেহেদী হাসান রিয়াদ,দৈনিক শিরোমণিঃ
কুমিল্লার দেবিদ্বারে মাদক দ্রব্য উদ্ধার করতে গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্থানীয় লোকজনের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ কর্মকর্তা ও সদস্য। বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার জাফরগঞ্জ গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ সংলগ্ন মীর বাড়ির রাসেল ইসলামের (২৭) ঘরে মাদক উদ্ধারে তল্লাসী চালানোর সময় এ ঘটনা ঘটে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ কর্মকর্তা ও সদস্যকে তাদের কর্মকর্তাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার সময় হামলার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা ১১টার দিকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের পরিদর্শক আবু বকর ছিদ্দিকের নেতৃত্বে একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী উপ-পরিদর্শক উত্তম বরন দেবনাথ, আবুল কাসেম, গাড়ি চালক মো. রফিকুল ইসলাম, সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম, মিঠুন চন্দ্র রবি দাসসহ ৬ সদস্যের একটি দল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ষ্টিকার লাগানো একটি জিপ (গাড়ি নং- নাভারা এল,ই ঢাকা-মেট্রো ঠ- ১৩-১৬৭৯) নিয়ে দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজারে আসেন। পরে তারা জাফরগঞ্জ গোমতী নদীর ভেরীবাঁধ সংলগ্ন মীর বাড়ির মৃত বজলু মিয়ার পুত্র মো. রাসেল ইসলাম (২৭) কে খোঁজ করেন। পরে তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মা রাফিয়া বেগম (৬৫) ও তার বোন ময়না আক্তার (২৯)কে হুমকী দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাদের ঘর থেকে কয়েক বোতল মদ ও কিছু ইয়াবা উদ্ধারের দাবি করে অভিযানে যাওয়া কর্মকর্তারা। স্থানীয়রা আরো জানান, তাদের পরিচয় পত্র চাইলে তারা দেখাতে না পাড়ায় উপস্থিত লোকজন তাদের ভূয়া ডিবির লোক মনে করে বেধরক মার ধর করতে থাকেন। এসময় স্থানীয় কিছু লোক এসে জনরোষ থেকে তাদের উদ্ধার করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর রেলওয়ে পুলিশের নিরাপত্তা প্রধান ডি,আই,জি মো. শাহ আলম মহোদয়ের জাফরগঞ্জ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। ডি,আই,জি মো.শাহ আলম তার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর কারনে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে দেবিদ্বার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন এবং আটককৃতদের পুলিশ হেফাজতে রাখেন।রাসেল জানায়, সকালে আমি জাফরগঞ্জ বাজারে আসার প্রস্তুতি নেই, এসময় কিছু অপরিচিত লোকজন আমার বাড়ির দিকে আসতে দেখে আমার সন্দেহ হয়, ওদের সাথে এলাকার কিছু চিহ্নীত মাদক ব্যবসায়ি ছিল। তাই আমি বাড়ির একটি ঘরে লোকিয়ে থাকি। ওরা আমার মায়ের ঘরে প্রবেশ করে। ওরা আমার মা’কে বলেন, আপনার ছেলে মাদক ব্যবসায়ি, তার মসোহারার ২০ হাজার টাকা নিতে এসেছি। এ সময় আমার মা ও বোন অস্বীকৃতি জানালে তারা ঘর তল্লাসী করে, এসময় নিজেদের রাখা কয়েকটি মদের বোতল ও ইয়াবা খুঁজে পায় বলে জানায়। এনিয়ে বার্গেনিং করতে থাকে। আমার মা বোনকে নিয়ে যাওয়ার হুমকী দেয়, পরে রফাদফায় ৭হাজার টাকায় নেমে আসে। তখন আমি ফোনে আমার বোনকে টাকা দিয়ে বিদায় করতে বলি। ঘরে ৬ হাজার টাকা ছিল, তা তাদের দেয়ার পর চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের ভুয়া সন্দেহে আটক করে মারধর করে।এ বিষয়ে রাসেলের বোন ময়না বেগম বলেন, ওরা কখনো ডিবির লোক, কখনো সিআইডির লোক আবার কখনো মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক বলে দাবী করেন। আমার ভাই মাদকের সাথে জড়িত না হলেও নিজেরাই ঘরে কিছু মাদক রেখে তারাই উদ্ধার করে আমাদের চাপ দিতে থাকেন এবং ২০ হাজার টাকা দাবী করেন। আমরা তা দিতে অপারগতা দেখালে পরে তারা ৭ হাজার টাকায় নেমে আসে। টাকা না দিলে আমাদের জোর করে তুলে নেয়ার হুমকী দেন। আমরা ঘরে থাকা ৬ হাজার টাকা দিলে তারা ওই টাকা ও মাদক নিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাদের সন্দেহ করে হামলা চালায়।সন্ধ্যায় দেবিদ্বার থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, কুমিল্লা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ সদস্যের একটি টিম মাদক উদ্ধার করতে দেবিদ্বারে অভিযানে আসেন। কিন্তু স্থানীয়দের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে অনাকাংখিত এ ঘটনা ঘটেছে। বিকালে অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা এসে তাদের নিয়ে গেছেন।এ ব্যাপারে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দেবিদ্বার-ব্রাক্ষনপাড়া সার্কেল) মো. আমির উল্লাহ বলেন, কুমিল্লা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ সদস্যের একটি টিম দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় মাদক উদ্ধার অভিযানে আসেন। রাসেলের বাড়ি থেকে কিছু মাদকও উদ্ধার করেন। স্থানীয়দের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে একটু হিচিং হয়। রাসেলের পরিবারের লোকজন বলছেন, ওদের ওখানে মাদক ছিলনা এবং তাদের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়ে আসেন। তাদের দেয়া টাকার বর্ননা অনুযায়ী মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজনের মানি ব্যাগে থাকা ২ টি এক হাজার টাকার নোট ও ৮টি পাঁচশত টাকার নোট পাওয়া গেলেও তার সাথে আরো টাকা ছিল। তাই সত্যটা নিরুপন করা কঠিন। তাই মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। ওনারা আসলে তাদের থানা থেকে হস্তান্তর করা হবে। পরবর্তিতে তাদের মতো তদন্ত করে তারাই ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।