রবিউল হাসান রাজিব,দৈনিক শিরোমণিঃ
ফরিদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ৩জন ছাত্র কোতয়ালী ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ তাদেরকে সংবর্ধনা দিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ২০ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে।সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তারা একটি মিছিল নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থান করতে থাকে। এমন সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীরা পরিষদ প্রাঙ্গণে থাকা দুইজন শিক্ষকের মটরসাইকেলসহ মোট চারটি মটর সাইকেল ভেঙে কুমার নদে ফেলে দেয়। এ হামলায় ৭ জনের মত আহত হয়। পাঁচজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরলেও দুইজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তারা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামীলীগের নেতারা সভা শেষ করে পরিষদের ভিতরে ছিল। হঠাৎ মাসুদ, কয়েশ, রুবেল, জাহিদ, রেজাউল, মোস্তফা, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রায়হান, করম, আলিনুর, তরুনসহ ৭০/৮০ জন হামলা করে। তারা রামদা, চাপাটি, চাইনিজ কুড়াল আর পাশের কামারের দোকান থেকে কাস্তে, বটি, খুন্তা ও হার্ডওয়ারের দোকান থেকে কোদালের আছাড়ি নিয়ে হামলা চালায়। তারা মটরসাইকেল ভাঙছে, দোকানের মালামাল লুট করছে। সব মিলে প্রায় ৭/৮ লক্ষ টাকার ক্ষতি হইছে।এ সময় ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ইউসুফ হাওলাদার হামলাকারীদের বাঁধা দিলে তাকে শাবল দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করলে কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। এ অবস্থায় তাকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে ও কিল, ঘুষি, লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি করে। তাকে বাঁচাতে তার ছোট ভাই ঐ ওয়ার্ডের যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর হাওলাদার এগিয়ে গেলে তাকেও মেরে রক্তাক্ত করে হামলাকারীরা। এছাড়া ইট পাটকেল ছুড়ে মারায় আরও কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে ঐ দুই ভাই এখনো হাসপাতালে।প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এই মাসুদ ও তার গুন্ডা বাহিনী ইউনিয়নকে সন্ত্রাসী মাদকসহ সকল অপকর্মের অভয়ারণ্যে পরিনত করেছে। শহর থেকে এই ইউনিয়নটি দুরে হওয়ায় সে এসব করতে এত সাহস পায়, তাছাড়া তাকে কোন এক দাদা শেল্টার দেয় শুনছি। যদিও তারা তার নাম উল্লেখ করেননি। তার বাহিনীতে ১৮ টি মামলার আসামী রয়েছে, যার নাম মোস্তফা। মোস্তফার পিতার নাম নাদের হোসেন। এই মোস্তফার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ মোট ১৮ টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ৪ টি মামলায় ওয়ারেন্ট রয়েছে। এই মাসুদ কি কাজ করে কেউ বলতে পারে না। তার এত টাকার উৎস কি? সারাদিন সে তার বাহিনীর কয়েকজনকে নিয়ে বাজারে বসে থাকে আর এলাকায় আশান্তি সৃষ্টি করার আলোচনা করে। তার বাহিনীর অধিকাংশই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। শোনা যায়, এই ত ম মাসুদ পারভেজ মাদক বিক্রি থেকে কমিশন নিয়ে চলে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবী জানাই এই মাসুদ বাহিনী ও মাদক বাহিনীর হাত থেকে যেন ইউনিয়নবাসী মুক্তি পায়।শিক্ষক মজিবর রহমান জানান, হামলার আগে আমি আমার মটর সাইকেলটি পরিষদ চত্বরে রেখে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে যাই। নামাজ শেষ করে এসে দেখি মাসুদ বাহিনী ইট পাটকেল ছুড়েছে। তখন ওরা আমাকেউ ধাওয়া করে, আমি দৌড়ে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিই। তখন দেখতে পাই আমার মটর সাইকেলসহ আরও তিনটি মটর সাইকেল ভেঙেচুরে উঠায় নিয়ে কুমার নদে ফেলে দিলো। আমি নিরুপায় হয়ে দেখলাম। আজ (২১ মে) দুপুরে চৌকিদার ও অন্যদের সাহায্যে নদী থেকে মটর সাইকেলগুলি উঠাই। এই মাসুদ বাহিনীর অত্যাচারে পুরো ইউনিয়নবাসীয় অতিষ্ট। এর থেকে কি আমরা মুক্তি পাবো না?
এ বিষয়ে মাসুদ পারভেজের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি স্পট থেকে আধা কিলোমিটার দুরে ছিলাম। ঘটনার সূত্রপাত তারাই করে, পরে আমাদের লোকজন হামলা করে। হামলায় আমাদের একজনও গুরুতর আহত হয়েছে। তাছাড়া আমি ঢাকায় থাকি, মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসি। এখানে আমার কোন বাহিনী নেই। মাদক ও সন্ত্রাসের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এটা প্রশাসনের কাজ, প্রশাসন ভালো বলতে পারবে।চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেগম শামসুন্নাহার মুহিত বলেন, এই মাসুদ পারভেজ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই তার বাহিনী নিয়ে ইউনিয়নজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে। আমাদের ইউনিয়নটি ছোট এবং সদর থেকে দুরে। এখানে প্রশাসনের আসতেও সময় লাগে, যে কারণে তারা এ সকল অপরাধমুলক কাজ করার সুযোগ বেশি পাচ্ছে। এখানে কেউ তার ভয়ে কিছু বলতে পারে না। তার বাহিনীতে মাদক কারবারী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজসহ বিভিন্ন মামলায় জেল খাটা লোকও আছে। যে কারণে কেউ তাদের সাথে লাগতে চায় না। এখানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী।কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিলের কাছে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উভয় পক্ষেরই দোষ রয়েছে। আজ (২২ মে) বিকেলে উভয় পক্ষকে থানায় আসতে বলেছি। সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
২১ views