রেদোয়ান হাসান সাভার,ঢাকা প্রতিনিধি,দৈনিক শিরোমাণিঃ
সাভারের বিভিন্ন এলাকায় রাতভর অভিযান চালিয়ে নারীসহ কিশোর গ্যাংয়ের ৭ সদস্যকে প্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।মঙ্গলবার দুপুরে প্রীজনভ্যানে করে অন্যান্য আসামিদের সাথে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এরআগে সাভারের আরাপাড়া ও বনপুকুর এলাকায় সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে হেরোইন ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সাভারের কামাল রোডের টুকু মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন (২৩), একই এলাকার আবুল বাশারের ছেলে আকাশ আহমেদ (২১), বিনোদবাইদের আলমদিনা রোডের অলি মিস্ত্রীর ছেলে শাওন সিয়া (২০), মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর এলাকার জিন্নাত আলীর ছেলে কবির হোসেন (২০), সে সাভারের বনপুকুর এলাকায় ভাড়া থাকতো। এছাড়া ওয়াবদা রোডের সেলিম মিয়ার ছেলে হৃদয় (২২), একই এলাকার লবণ মিয়ার ছেলে গোলাম রাব্বী (২৩)। এরা সবাই মাদক ও ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত বলে প্রাথমিকভাব জানা গেছে। অন্যদিকে সাজেদা বেগম(৪০) নামে এক ছদ্মবেশী পাগলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কাছে মাদক সরবরাহ এবং তাদের সহায়তায় মাদকের ব্যবসা করতেন তিনি। সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তাহমিদুল জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার গভীর রাত থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নারীসহ কিশোর গ্যাংয়ের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তল্লাশী করে আড়াই হাজার পুড়িয়া হেরোইন ও আধা কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ওই নারী পাগলের বেশে কিশোর গ্যাংয়ের সহায়তায় সাভারের বিভিন্ন এলাকায় মাদক সরবরাহ করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। পিনিক রাব্বী কিশোর গ্যাং লিডার তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ সাভার মডেল থানায়একাধিক মামলা রয়েছে ।এদিকে সম্প্রতি সাভারের বিভিন্ন এলাকা ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি কিশোর আপরাধী চক্র। ফেসবুকে গ্রুপ খুলে প্রচারণা, বাহারি পোশাক, মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়ার মাধ্যমে এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে তারা। তাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষ।সাভারের সবচেয়ে ভয়ংকর কিশোর গাংটি হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও পাশ্ববর্তী এলাকায় ব্রাদারহুড নামের একটি কিশোর দল। যার নেতৃত্বে রয়েছে জাবি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক শহিদুল ইসলামের ছেলে মিরাজ ওরফে ফারভিদ মিরাজ। এই গ্যাংটির সক্রিয় সদস্যরা হলো- ইশতিয়াক আহমেদ রুদ্র, আরিয়ান তাহসিন তূর্ণ, সালমান হোসেন রাতিন, রাকিব হোসেন, শারাফ শাফিন ইমন, মোতাহের হোসেন তাসিম প্রমুখ।’ডিফারেন্ট বয়েজ’ নামে আরেকটি কিশোর গ্যাং রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের কলাবাগান এলাকায়। উজ্জল সিয়ামের নেতৃত্বে এই গ্রুপে আবু সুফিয়ান আকাশ, কামরুল হাসান রনি ও সবুজ ইসলাম বাবুসহ রয়েছে অনেক কিশোর।সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় হানিফের নেতৃত্বে রয়েছে আরেকটি কিশোর গ্যাং। গীটার ও বদ্যযন্ত্র নিয়ে বিভিন্ন এলাকার মাঠে বসে গান করে রেড়ানো এই গ্যাংটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, ইভটিজিং, উঠতি বয়সের কিশোরেদের নানা অসামাজিক কাজে জড়িত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।সাভারের থানা রোড এলাকায় অধরচত্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিক আল সায়েমের নেতৃত্বে রয়েছে কিশোর গ্যাং। এই গ্যাংয়র সদস্য ১৫-২০ জন। সাভারের মুক্তির মোড়, ব্যাংক কলোনি ও আশে পাশের এলাকায় বন্ধুরা মিলে উশৃঙ্খলভাবে চলাফেরা করে তার গ্যাং এর সদস্যরা।পৌর এলাকার ৭নং ওয়াের্ডের বিভিন্ন খোলা মাঠে প্রতি সন্ধ্যায় বসে উঠতি বয়সের কিশোরদের মাদক সেবনের আড্ডা। শাহীবাগ বড় মাঠ, মডেল কলেজ মাঠ, রাজা হরিশ চন্দ্রের বাড়ি, চাপাইন স্কুল মাঠসহ কয়েকটি স্থানে প্রকাশ্যে দলবেঁধে মাদক সেবন করে এসব কিশোররা। মজিদপুর এলাকায় রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে রয়েছে কিশোর আপরাধী চক্র। ছাত্রলীগের কোন কমিটিতে নাম না থাকলেও ছাত্রলীগের নামে সাভার বাসস্ট্যান্ডের ফুটপাত থেকে নিয়মিত চাঁদা উত্তোলন করে এই গ্যাংটির সদস্য শাওন আহমেদ, ইসরাফিলসহ কয়েকজন কিশোর।অন্যদিকে সাভার পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডে দাপিয়ে বেড়ায় সায়েম রহমান সাদাফ ওরফে মুন্সি সাদাফ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চুরির অভিযোগ। গত বছর তার প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনের ছবি ভাইরাল হয়। রাজাশনের ঈদগাহ মাঠ এলাকায় মাদক সেবন করে কিশোর সজিব, সুজন ও ফাতিন। গ্যারেজ এলাকায় মিঠু ও ঘাসমহল এলাকায় হৃদয় নামে আরেক কিশোর দাপিয়ে বেড়ায় উঠতি বয়সের কিশোরদের নিয়ে।সাভার মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, গতকাল সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্য়ন্ত অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মাদক ব্যবসা, ছিনতাইসহ তারা এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করছিলো। সামাজিক বিশৃঙ্খলা রোধে কিশোর অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
২৪০ views