রাকিব হাসান, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
গ্যাস্ট্রিক বা আলসার নামটি শোনেনি আমাদের দেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।সাধারণ লোকজন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বোঝান চিকিৎসকরা তাকে বলেন পেপটিক আলসার।আমাদের দেশের খুব পরিচিত অসুখ এই পেপটিক আলসার।
মানুষের পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নামক খুব শক্তিশালী এসিড তৈরি হয়। এই এসিড পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে ক্ষত তৈরি করে। তবে এই এসিডকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য আমাদের শরীরের বেশ শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। এবং পাকস্থলির দেয়াল হতে নি:সৃত প্রতিরোধি রস, পিত্তথলী হতে আসা পিত্তরস ও খাদ্যনালীর দেয়ালের শক্ত মিউকাস মেমব্রেন আলসার হতে বাধা দেয়। স্বাভাবিকভাবে তাই আমাদের আলসার হয় না। কিন্তু যখন এগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় তখন দেখা দেয় বিপদ। এসিডের আধিক্য বেশি হলে বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পরলে পাকস্থলীর গায়ে, ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে এবং অন্ননালির শেষাংশে ক্ষত আলসার হয়। পেটের এই অসুখের নামই পেপটিক আলসার।
পেপটিক আলসারের প্রধান কারণ হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়া।দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে এই জীবানু শরীরে প্রবেশ করে এবং বিভিন্নভাবে এই জীবাণু আলসার তৈরি করে। আবার বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ পাকস্থলীর এসিডিটি বাড়িয়ে আলসার হওয়ার জন্য দায়ী।আমাদের দেশে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এই ব্যথার ওষুধগুলি খান। এথেকেও হতে পারে আলসার।
ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, মানসিক চাপ,বিভিন্ন ক্রনিক রোগ ইত্যাদি পেপটিক আলসারের ঝুঁকি অনেকগুণে বাড়িয়ে দেয়।তবে সাধারণত যে কথাটা প্রচলিত ভাজা-পোড়া কিংবা ঝাল-জাতীয় খাবার খেলে পেপটিক আলসার হয় এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে মেলেনি। তবে যারা নিয়মিত আহার গ্রহণ করেন না, কিংবা দীর্ঘ সময় উপোস থাকেন, তাদের মধ্য পেপটিক আলসার দেখা দিতে পারে।
কোন কোন খাবার খেলে কারও কারও গ্যাস্ট্রিক এসিড বেশী বেশী তৈরি হয়। তাই সেইসব খাবার পরিহার করলে গ্যাস্ট্রিক রোগ কম হয়। এবং গাস্ট্রিক এসিড কমানোর জন্য এন্টাসিড দেয়া হয়। হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ইনফেকশন থাকলে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। রক্ত পরীক্ষা করে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ইনফেকশন আছে কিনা জানা যায়। পেটে ক্যান্সার হলেও গ্যাস্ট্রিকের অনুরূপ সিম্পটম হয়। এন্ডোস্কোপি পরীক্ষা করে স্টোমাকে, ডিওডেনামে ও ইওসোফেগাসে প্রদাহ ও আলসার (ক্ষত) অথবা ক্যান্সার আছে কি না তা দেখা যায়।
সুতরাং কারো গ্যাস্ট্রিক সিম্পটম দেখা দিলে ফার্মেসী থেকে নিজের ইচ্ছা মতো গাস্ট্রিকের ওষুধ না খেয়ে আসলে কি রোগ হয়েছে তা ডাক্তার দেখায়ে নির্নয় করে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
লেখক: ডা.মোঃ সাইফুল আলম। এম.ডি.(রুদেন ইউনিভার্সিটি)মস্কো, রাশিয়া