ফয়সাল জামান ফাহিম, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ অপেক্ষমান তালিকা থেকে শিক্ষার্থী সংগ্রহ বন্ধ এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির সিট সংখ্যা অপূর্ণ রেখেই তিন মাস ক্লাস করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন এমন কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় মাননীয় উপাচার্য বরাবর চিঠি প্রদান করেন। তারা দাবি করেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এবং প্রশাসন সিট সংখ্যা অপূর্ণ রেখে অপেক্ষামান শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষক এবং প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন বলে আশ্বাস দিলেও বিগত ৯ মাসে পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। তারা আরো বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত পরীক্ষা এবং ফলাফল ঘোষণার নির্ধারিত সময়সূচী পরিবর্তন সহ পরীক্ষার সেন্টার পরিবর্তনে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানায় পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব করে পূর্ববর্তী প্রশাসন।
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন- শিক্ষার্থী ভর্তি অনেক পূর্বেই সমাপ্ত হয়েছে এবং তিন মাস শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট সংখ্যা ফাঁকা আছে এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই সিট সংখ্যা ফাঁকা থাকে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার এ সকল বিষয়ে প্রশাসনের ব্যর্থতা রয়েছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দিবেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন- ইতোমধ্যে এ বিষয়ে জুম এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত এসেছে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারে যে সকল শিক্ষার্থীরা এখনো অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন তাদের ভর্তি নেওয়া হবে না। তবে দ্বিতীয় সেমিস্টারে অপেক্ষামান শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া যায় কিনা এ বিষয়ে পরবর্তী মিটিংয়ে তুলে ধরবেন। তিনি আরো বলেন অপেক্ষমান শিক্ষার্থীরা যেহেতু তাদের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে ইতোমধ্যে বঞ্চিত হয়েছে, তাই তাদের ভর্তি এই বছরে নেওয়া সম্ভব না হলেও পরবর্তী বছরে যে সকল শিক্ষার্থীরা অপেক্ষামান তালিকায় শুরুর দিকে ছিল তারা ভর্তি পরীক্ষা দিলে এবং পাস মার্ক তুলতে পারলে, তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। ভর্তি সংক্রান্ত এসকল বিষয়ে জটিলতার জন্য অবশ্যই প্রশাসনের ব্যর্থতা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন- অপেক্ষমান তালিকায় থাকা অনেক শিক্ষার্থী আমাকে ফোনে, এসএমএসে , ইমেইলের মাধ্যমে তাদের আকুতির কথা জানিয়েছে। একথা অনেক শিক্ষকদের ও তারা জানিয়েছে বলে জানি। তাদের ব্যাপারটা অত্যান্ত মানবিক, একজন শিক্ষার্থীর হয়তো এটা শেষ ভর্তি পরীক্ষা, সে অপেক্ষমান তালিকায় আছে বিধায় অন্য কোথাও ভর্তি হয়ে না থাকে তবে তার শিক্ষা জীবন সংকটময় হয়ে যেতে পারে, এটা কখনোই কাম্য না। তবে এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। প্রশাসন ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আরো দূরদর্শী হলে এই অবস্থা এড়ানো যেত।
বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশ বিজ্ঞান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী তামজিদ হোসেন বলেন- ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়টিতে আসন সংখ্যা অপূর্ণ রাখা বলতেই বোঝায় কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন মেরে ফেলা।একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষার্থী পড়তে চায়। তবে যদি প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্বেও পড়তে না পারে তবে সেটি খুবই দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন বিভিন্ন সময়ে পূর্ববর্তী বিভিন্ন ঘটনায় আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি সহ ভর্তি বাণিজ্যের মতন বিভিন্ন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বারবার উঠে এসেছে এবং ভর্তি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করেনি পূর্ববর্তী প্রশাসন।২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস হয়। এর দায়ভার কোনভাবেই পূর্ববর্তী প্রশাসন এড়িয়ে যেতে পারে না।
উল্লেখ্য, বশেমুরবিপ্রবিতে কত সংখ্যক সীট ফাঁকা আছে, সে বিষয়ে ভর্তি কমিটির প্রধান ব্যক্তিবর্গ কেউই সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য দিতে পারেনি।তবে ভর্তি কমিটির একজনের একটি বক্তব্যে ১০০০ সংখ্যক সিট ফাঁকা রাখার পূর্ব পরিকল্পনা উঠে এসেছে।তবে এই তথ্যের সত্যতা নিয়ে অনেকেই সন্ধিহান।