মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের সনি সিনেমা হলের উল্টো পাশে বিশাল বিপণিবিতান ‘স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট’। ৬৬ দশমিক ৬৬ কাঠা জমির ওপর গড়ে ওঠা এ মার্কেটে দোকান রয়েছে কমপক্ষে ৩০০। সরকারি জমি দখল করে ২০০৯ সালে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল এটি নির্মাণ করে। বিশাল আকারের এ ইমারত নির্মাণে কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়ে চারতলা মার্কেট নির্মাণ করেছে। এ বিপণিবিতানে একটি দোকান ভাড়া নিতে স্থানভেদে মাসিক ভাড়া গুনতে হয় ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। আর জামানত দিতে হয় প্রতি দোকানে ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় দখলদারদের বিষয়ে নানা আইনি ব্যবস্থা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এবার চূড়ান্ত উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর এরই মাধ্যমে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) প্রায় ১৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি নিজেদের দখলে আসবে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
জাগৃকের নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা ডিভিশন-১) জোয়ার্দার তাবেদুন নবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাগৃকের এ জমিতে প্রভাবশালী মহল একটি বড় আকারের মার্কেট নির্মাণ করে বছরের পর বছর ধরে ভাড়া আদায় করছে। প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার এ জমি আমরা উদ্ধারের জন্য দাপ্তরিক কাজ করেছি। দখলদারদের উচ্ছেদ করে সেখানে জাগৃক তাদের পরিকল্পনামাফিক ফ্ল্যাট ও আধুনিক বহুতল মার্কেট নির্মাণ করবে।’
জাগৃক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জাগৃকের (ঢাকা ডিভিশন-১) থেকে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে একটি উচ্ছেদ প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেখানে মিরপুর ১নং সেকশনের ‘এফ’ ব্লকের কলওয়ালাপাড়ায় পুনর্বাসন প্লট নম্বর ৯২ থেকে ১০৫ তৎসংলগ্ন জায়গার ওপর অবৈধ স্থাপনা ও দখলের উচ্ছেদের প্রস্তুতির বিষয়ে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, এ জমিটি জাগৃকের তফসিলভুক্ত ও রেকর্ডীয় সম্পত্তি। ১ দশমিক ৫ একর জমিটি দখল করে সেখানে ‘স্বাধীন বাংলা মার্কেট’ নির্মাণ করে চারতলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি উচ্ছেদ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বহুতল বিশিষ্ট ভবনে ফ্ল্যাট ও আধুনিক মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী নকশা প্রণয়নের কার্যক্রমও চলছে। উচ্ছেদ কার্যক্রমের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশসহ দক্ষ শ্রমিক চাওয়া হয়েছে।
জাগৃক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই জায়গাটি এলএ কেস নম্বর ১৩/৫৯-৬০ এর আওতায় জেলা প্রশাসন থেকে অধিগ্রহণের পর জাগৃককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মোট ৬৬ দশমিক ৬৬ কাঠা জায়গায় ১৯৯০ সালে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ১৪টি প্লট তৈরি করা হয়। এ প্লটগুলোর মধ্যে ৮ দশমিক ৩২ কাঠা সুফিয়া খাতুন, ৮ দশমিক ৩৩ কাঠা আওলাদ হোসেন, ৮ দশমিক ৩৩ কাঠা সামসুদ্দিন আহমেদ, ৮ দশমিক ১৩ কাঠা মোছা. জরিনা খাতুন, ৭ দশমিক ৭৫ কাঠা হাজেরা খাতুন, ৪ দশমিক ১৬ কাঠা রেহেনা আক্তার, ৩ দশমিক ৫৪ কাঠা গোলাম হোসেন, ৩ দশমিক ৫৬ কাঠা হাজি নূর মোহাম্মদ, ২ দশমিক ৪ কাঠা আশরাফ উদ্দিন, ২ দশমিক ৫০ কাঠা লাবিব উদ্দিন, ২ দশমিক ৫০ কাঠা আবদুল হাই, ২ দশমিক ৫০ কাঠা ফজিলাতুন্নেছা, ২ দশমিক ৫০ কাঠা জামাল উদ্দিন চৌধুরী ও ২ দশমিক ৫০ কাঠার প্লট রুহুল আমিন খানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কাগজপত্রে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা আজও দখল বুঝে পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, দশম সংসদ গঠিত হওয়ার পরই বেদখল হওয়া সরকারি প্লট উদ্ধারের বিষয়ে তৎপর হয় তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। একপর্যায়ে এ বিষয়ে একটি চার সদস্যের উপকমিটি গঠন করা হয়। এর আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ কামাল আহমেদ মজুমদারকে। উপকমিটির পক্ষ থেকে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা করে অনুসন্ধান করানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে অনুযায়ী সুপারিশ করে। এরপর নানা জটিলতায় সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।
জাগৃকের সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয়) কাজী ওয়াসিফ আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ প্লটগুলো দীর্ঘদিন ধরে বেদখলে রয়েছে। আমরা আইনি জটিলতায় সেখানে উচ্ছেদ চালাতে পারিনি। আমাদের সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি সবকিছু ঠিক থাকলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ জমি সরকারের অনুকূলে আনা সম্ভব হবে।’