জেমস আব্দুর রহিম রানা, স্টাফ রিপোর্টার দৈনিক শিরোমণিঃ যশোরের মনিরামপুরের কথা সাহিত্যিক ডাঃ আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর ইন্তেকাল করেছেন । তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারনে দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসাধিন ছিলেন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চিকিৎসাধিন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। জানাযায়, উপজেলার মোবারকপুর গ্রামে ১৯৫৭ সালে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। তার পিতা মরহুম মৌলভী কেরামত আলী গাজী, মাতা মরহুমা আইমানী বিবি। তিনি কেশবপুর উপজেলার সাতবড়িয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে উপসহকমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ৪বছর পূর্বে তিনি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন। নিজ কমর্স্থল এলাকায় তিনি একজন জনপ্রিয় চিকিৎসক ছিলেন। অবসরে গেলেও আজও তার অভাব সেখানকার মানুষ চরমভাবে উপলব্ধি করেন। নিভৃত পল্লীতে জন্ম গ্রহন করেও তিনি নিয়মিত সাহিত্য চর্চা কনে যেতেন। চলার পথে, মৃত্যুর সমুদ্র শেষ, গল্পে মধুসূদন, একটু গেলে বুনোপথ, রেখ মা দাসেরে মনে, রজনীগন্ধা বনে ঝড়, নিষিদ্ধ সৌরভ, বিনষ্ট সংলাপ, চির জনম হে, মাধুরী, শঙ্খচুড়, শাওন, নির্বাচিত গল্প (কলিকাতা), তোমাকে ভালবেসে (কলিকাতা), ডহুরী, এস,এম, সুলতান সচল সবাক ইতিহাস, এস,এম,সুলতান কর্ম ও জীবণ, ব্রাত্যজনসহ তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা। প্রথম উপন্যাস প্রান্তজন, মারিয়া, লোকজন, কপোতাক্ষী, বালাখানার মেহমান- চলচ্চিত্রায়িত ( আল –মানার অডিও ভিজ্যুয়াল সেন্টার, মগবজার, ঢাকা)। শেষকৃত্য, সুন্দর বনের লোকজীবন, সুন্দরবনের ক্ষুদ্র নৃ, অযাচিত।তার সম্পাদিত পত্রিকাঃ ক্ষণিক, স্মৃতি, আগন্তক, শিল্প-সাহিত্য, মেডিক্যাল জার্নল (কুষ্টিয়া)। সম্পাদিত গ্রন্থঃ শিল্পী রফিক হুসাইন বিরচিত – বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের ইতিহাস। অনুদিত গ্রন্থঃ (Slective novel of ABUL HOSSAUN JAHANGIR)। এসব সাহিত্য রচনায় কৃতিত্বের জন্য তিনি বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কিৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি সংবর্ধিত হয়েছেন। লাভ করেছেন বেশ কিছু পুরস্কার ও সন্মাননা। ২০০৮ সালে রাজগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ এবং রাজগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় তাকে সন্মাননা প্রদান করেন।এছাড়া অনান্য পুরষ্কার ও সম্মননার মধ্যে রয়েছে, ব্র্যাক ট্রাস্ট কিশোরী ক্লাব মোবারকপুর, রংধনু সাহিত্য পুরস্কার ডুমুরিয়া- খুলনা, সুজন সম্মানানা মনিরামপুর, জীবনান্দ দাস সম্মাননা কলিকাতা, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা, ঢাকা। ধান সিঁড়ি সম্মননা, ঢাকা। এছাড়াও লেখক তার রাজগঞ্জের নিজ বাড়ীতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি ব্যাক্তিগত গ্রন্থাগার। সেখানে অসংখ্যা বই এবং পত্র পত্রিকা আছে। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারী গ্রন্থাগারের সামনে বসে দিন ব্যাপী বই মেলা। অসংখ্যা বইপ্রেমি সেদিন পাঠাগার প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে পরিচিত হন নিত্য নতুন বইয়ের সাথে। পাঠকেরা তা বিনামূল্যে পাঠ করেত পারেন। তিনি তার পাঠাগারের পাশেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি মসজীদ সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে স্থানীয় মুসল্লীরা। বহু প্রতিভার এই সাহিত্যিক চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করার কিছু দিন পরে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারনে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার ফলে কিছুটা উন্নতি হলেও আর তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পরে অবশেষে বুধবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোর সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় মরহুমের নামাজে জানাজা পারিবারিক কবরস্থানে স্ত্রী নাসিমা খাতুনের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যু কালে তিনি ৩পুত্র, আত্মীয় স্বজনসহ বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন মহল ও সংগঠন তার মৃত্যুতে শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
৩ views