অনলাইন @ঃ: কালাই রুটির আদি উৎসভূমি হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চল। যাকে বলে দিয়াড়। এটি ছিল নি¤œবিত্ত মানুষের খাবার। সকালে এটি দিয়ে লাহারী খাওয়া (নাস্তা) হয়। কৃষকরা ভোর বেলায় মাঠে গেলে কৃষাণ বধূ লাহারী বানিয়ে কাপড়ে মুড়িয়ে পরম যতেœ নিয়ে যায় মাঠে কৃষকের কাছে। এটি খেলে পেটে অনেকক্ষণ থাকে বলে ক্ষিধে কম লাগে। আবার পুষ্টিমানের দিক দিয়েও অনন্য।
জাতীয় অথবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় কর্মীরা খাবার হিসেবে গামছা কিংবা কাপড়ে বেঁধে কালাই রুটি অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যায়। এই রুটির কারনে এক সময় রসিকতা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষকে ‘কালাই’ বলে সম্বোধন করা হতো। আর সেই কালাইয়ের রুটির জনপ্রিয়তা এখন দেশ-বিদেশে। কালাই বলে সম্বোধন করলে আগে বিব্রত হলেও এখন গর্ব অনুভব করে।
কালাইয়ের ডাল কি রসনা মেটায় না? পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে এর গুণও অনন্য। এতে রয়েছে শতকরা কুড়ি থেকে পঁচিশ ভাগ আমিষ। প্রোটিন ও ভিটামিন বি এর অন্যতম উৎস্য। রুচিকর ও বল বর্ধক। পুরুষের শুক্রানু বাড়ায়। রয়েছে প্রচুর আয়রণ। প্রচুর ফাইবার আছে বলে হজম ভালো হয়। কোষ্ঠ্য কাঠিন্য দূর করতে বেশ উপকারি। হার্ট ভাল রাখে। কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাকৃতিক উদ্দীপক হিসাবে এ ডাল ভাল কাজ করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে এবং ব্যাথানাশক। সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকের যতেœ দারুণ কাজ করে।
রোদে পোড়া ত্বক, মুখের দাগ, ব্রনসহ নানা রোগের উপশম করে। এ ডাল মুখে মাখলে চুলের খুশকি দূর হয় আর চুলও নরম হয়। কালাইয়ের ডাল স্বাদ ও গন্ধে অনন্য। তৃপ্তিসহ ভাত খেতে চাইলে এ ডাল খেয়ে দেখতে পারেন। দিন দিন বাড়ছে কালাইয়ের ডালের চাহিদা ও দাম। আগে সবচেয়ে কমদামি ডাল ছিল এটি। আর এখন হয়েছে উল্টো। সবচেয়ে বেশি দামি ডাল এটি।
চাহিদা আর দামের কারনে এরমধ্যে আবার ভেজাল অনুপ্রবেশ করেছে। মেশানো হচ্ছে কালিকালাই আর মুগডাল। ডাল কিংবা কালাইয়ের রুটির আসল স্বাদ নিতে হলে বাজার থেকে কালাই কিনে ভেঙে ডাল কিংবা আটা করাই উত্তম। আগে কালাইয়ের রুটি শীতকালে বেশি খাওয়া হলেও এখন বছরজুড়েই চলছে। শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদেরও প্রিয় খাবার। আর হাত বাড়ালেই সহজেই মেলে এমন মুখরোচক ও পুষ্টিকর খাবার। যারা এখনো এর স্বাদ নিতে পারেননি তারাও চলে আসতে পারেন।