অনলাইন @ উপকূলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুরের ‘লক্ষ্মী’ হিসেবে পরিচিত অর্থকরী ফসল সুপারি। প্রতি বছর এ অঞ্চলে উৎপাদিত সুপারি দেশের সিংহভাগ সুপারির চাহিদা পূরণ করে। মৌসুমের শুরু থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাটবাজারে সুপারি কেনাবেচায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের সুপারি চাষিদের। পরিসংখ্যান অনুসারে, এ অঞ্চলের অর্থনীতির একটি বিরাট অংশ আসে সুপারি খাত থেকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে দুই লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৩ টন সুপারির মধ্যে এ জেলায় এক লাখ ৩১ হাজার ৫৯৩ টন উৎপাদিত হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩২৫ কোটি টাকা। তবে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এ জেলায় ৯২১ টন সুপারি কম উৎপাদন হলেও দেশের সুপারি বাজারের শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে জেলাটি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে ছয় হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় এক হাজার ৯০০ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় তিন হাজার ১৫০ হেক্টর, রামগঞ্জ উপজেলায় ৮৯০ হেক্টর, কমলনগর উপজেলায় ৩৭৫ হেক্টর ও রামগতি উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে সুপারি উৎপাদন হয়।
চাহিদার তুলনায় উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় সুপারি থেকে বেশি আয় করা যায়। সুপারি গাছ একবার রোপণ করলে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই টানা ৩৫ থেকে ৪০ বছর ফলন দেয়। সুপারি বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগ-বালাই কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা ফসলটি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে সুপারি গাছে ফুল আসে। পরে ফুল থেকে সৃষ্ট সুপারি পুরোপুরি পাকে কার্তিক-অগ্রহায়ণে। মূলত কার্তিকের শেষ আর পুরো অগ্রহায়ণ সুপারির ভরা মৌসুম।
সুপারির প্রায় ৭০ ভাগ নদী-নালা, খাল-ডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউজে ভিজিয়ে রাখেন স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ীরা। আর ৩০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। তবে লক্ষ্মীপুরে সুপারি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র থাকলে সুপারি চাষিরা সুপারির আরও ভালো দাম পেতেন।
জেলায় সুপারি বিক্রির প্রধান মোকামগুলো হলোÑসদর উপজেলার পৌর বাজার, দালাল বাজার, চররুহিতা, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, দত্তপাড়া, জকসিন, রায়পুর উপজেলার পৌর বাজার, হায়দরগঞ্জ বাজার, সোনাপুর, দেনায়েতপুর, খাসের হাট, মোল্লারহাট, রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর বাজার, করপাড়া বাজার প্রভৃতি। এছাড়া সুপারিকে ঘিরে পুরো জেলায় চলে জমজমাট ব্যবসা।
সুপারির মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার সুপারি ব্যবসায়ীরা নিজেদের চাহিদামতো সুপারি এ জেলার স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। প্রতি পোন সুপারি (৮০ পিস) মানভেদে ৯০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা। প্রতি কাহন (১২৮০ পিস) সুপারি দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। সুপারি বাগান করার মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কিছুটা বেশি। এতে ভালো দাম পেয়ে চাষিরাও খুশি।