অনলাইন @ বাঙালি চিরকালই খাদ্যরসিক। কলকাতা শহর বিভিন্ন রকম খাবারের জন্য বিখ্যাত। সারা পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় পাওয়া যায় ঐতিহ্যবাহী নানা স্বাদের খাবার। বাংলাদেশেও খাবারের বৈচিত্র্য কম নয়। ঢাকার বাকরখানি এবং বিরিয়ানি যেমন প্রসিদ্ধ, তেমনি নোয়াখালির নারকেল নাড়ু, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, সিলেটের আচার, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, চট্টগ্রামের মেজবানি মাংস – বলে শেষ করা যাবে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মিষ্টি ছানামুখীর নাম ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশে। যদি কখনো বাংলাদেশে যান, আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘোরার সুযোগ যদি পান, এই মিষ্টি না চেখে ফিরবেন না। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মুঘল আমলে মসলিন তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল। ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে এখানকার অবদান প্রচুর। জিভে জল আনা ছানামুখী পাওয়া যায় এখানে। তালের বড়া ও রসমালাইয়ের জন্যও ব্রাহ্মণবেড়িয়ার নামডাক আছে।
দেশি গরুর খাঁটি দুধ থেকে তৈরি করা হয় ছানামুখী। চারকোনা, ছোটো, হাল্কা এবং শক্ত। ওপরে জমাট বাঁধা চিনির প্রলেপ থাকে। কোথাও কোথাও ছানার মুড়কি নামেও পরিচিত। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো স্বাদ অন্য কোথাও নেই। ব্রিটিশ আমল থেকেই এর খ্যাতি নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কথিত আছে, প্রায় একশো বছর আগে প্রথম ছানামুখী তৈরি করেছিলেন মহাদেব পাঁড়ে। আদতে তিনি কাশীর বাসিন্দা। বড়ো ভাই দুর্গাপ্রসাদের মিষ্টির দোকান ছিল কলকাতায়। সেখানেই কাজ করতেন কিশোর মহাদেব। হঠাৎ দুর্গাপ্রসাদ মারা গেলেন। নিরাশ্রয় হয়ে মহাদেব ঘুরে বেড়াতে লাগলেন নানা জায়গায়।
ওই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা অঞ্চলে শিবরাম মোদকের মিষ্টির দোকান ছিল। সেখানে চাকরি এবং আশ্রয় পেলেন মহাদেব। তিনি কাজ শুরু করার পর দোকানেরও খুব প্রতিপত্তি হল। তাঁর মিষ্টি তৈরির হাত ছিল দারুণ। খেয়ে তো সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শিবরাম মারা যাওয়ার আগে মিষ্টির দোকানটি মহাদেবকে দিয়ে যান।
সুস্বাদু ছানামুখী
ছানামুখী বানিয়ে মহাদেব যেমন স্মরণীয় হয়ে আছেন, তেমনি লেডিকেনিরও স্রষ্টা তিনি। বড়োলাট লর্ড ক্যানিং-কে খুশি করতে মহাদেব বিশেষ ধরনের মিষ্টি তৈরি করে কলকাতা পাঠিয়েছিলেন। বড়োলাট এবং তাঁর স্ত্রী – দু’জনেই মিষ্টি খেয়ে অভিভূত। লেডি ক্যানিং-এর নাম থেকে সেই নতুন মিষ্টির নাম হল ‘লেডিকেনি’। ১৯৮৬ সালে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউল হক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে তিনি সেখানে ব্রাহ্মণবেড়িয়ার লেডিকেনি খেয়েছিলেন। মিষ্টির স্বাদে মোহিত হয়ে এমন তারিফ করেছিলেন, পাকিস্তানের বেশ কিছু সংবাদপত্রে তার খবর বেরিয়েছিল।
ব্রাহ্মণবেড়িয়া ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও ছানামুখী পাওয়া যায় না সেভাবে। গরমকালে এই মিষ্টির চাহিদা বেশি থাকে।