আর মাত্র একদিন পরেই দেশে পালিত হবে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় উৎসব ঈদুল আজহা। এই ঈদের আগের শেষ কার্যদিবস সোমবার (১৯ জুলাই) নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে দেশের শেয়ারবাজার।
এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। এতে প্রথমবারের মতো ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার ৪০০ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে।
ঈদের আগের শেষ কার্যদিবসে এমন রেকর্ড সৃষ্টি হওয়ায় বেশ খুশি বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বে এখন করোনার হানা। করোনার প্রকোপে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। ঈদের সেই আনন্দ মানুষের মধ্যে নেই। তারপরও দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরায় বিনিয়োগকারীরা খুশি।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার ডিএসইতে লেনদেনের শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে প্রথম মিনিটেই ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে পরবর্তীতে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়। এতে ১০টা ৩০ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতেও বাড়তে থাকে একের পর এক ব্যাংকের শেয়ার দাম। ফলে দেখতে দেখতে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়ে সূচক।
একের পর এক ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতনের পরও দিনের লেনদেন শেষে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৭টি ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে মাত্র দুটির।
ব্যাংকের এই দাপট দেখানোর দিনে ভিন্ন পথে হেঁটেছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। কয়েকদিন ধরে দাম বাড়ার তালিকায় দাপট দেখালেও এদিন একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডও দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পারেনি।
অবশ্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পতনও শেয়ারবাজারের রেকর্ড রুখতে পারেনি। দেশের শেয়ারবাজারে একদিনে তিনটি রেকর্ড হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক প্রথমবারের মতো ৬ হাজার ৪০০ পয়েন্ট অতিক্রম করার পাশাপাশি বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে।
সেই সঙ্গে বাজার মূলধনও এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকায়।
অপরদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৪০৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩২২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিনিয়োগকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঈদের আগে শেয়ারবাজার আমাদের জন্য বেশ ভালোই গেছে। আশাকরি ঈদের পরও বাজার ভালো থাকবে। আর বাজার ভালো থাকলে একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি হবে।’
বাবলা নামের আর এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘নতুন কমিশনের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে আজকে শেয়ারবাজার এই অবস্থায় পৌঁছেছে। আশা করি, এই কমিশন সামনেও তাদের এই অবস্থান ধরে রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহামারি করোনার প্রকোপে এখন সবাই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। আগে ঈদ নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আনন্দ ছিল, এখন তা আর নেই। করোনা সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। এই কঠিন মুহূর্তে শুধু শেয়ারবাজার থেকেই কিছুটা ভালো সংবাদ আসছে। ২০১০ সালের হারানো পুঁজি ফিরে না আসলেও এক বছরের বেশি সময় ধরে বাজার ভালো থাকায় বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী লোকসান অনেকটাই পুষিয়ে নিয়েছেন।’
এদিকে সূচকের এই উত্থানের দিনে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৯টির। আর ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৭৯৩ কোটি ২ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৫২৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সাইফ পাওয়ারটেকের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর ২৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং সিরামিক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- পাওয়ার গ্রিড, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রবি, জিনেক্স ইনফোসিস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ এবং এস এস স্টিল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৯০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৮টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।