নরসিংদী প্রতিনিধি মো: খায়রুল ইসলামঃ জনবান্ধব এবং মানবিক জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন ২০১৮ সালের ১১ মার্চ নরসিংদী জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি এ জেলার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনাজয়ী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন নরসিংদী জেলায় দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই সর্বস্তরের লোকজনের সাথে মিশে সবার সহযোগিতায় নরসিংদী জেলাকে একটি ডিজিটাল মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহন করে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি নরসিংদী জেলায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শতভাগ লকডাউন কার্যকর করেন। এমনকি করোনার প্রার্দুভাবের জন্য খেঁটে খাওয়া কর্মজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে; বিষয়টি অনুধাবনের পর তিনি নিজ উদ্যোগে লকডাউন বিদ্যমান থাকাকালীন সময়ে ২০ হাজারের ও বেশী কর্মহীন গরীব মানুষের বাড়ীতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন।
এছাড়া জেলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অত্যন্ত পেশাদারীত্বের সাথে শতভাগ আন্তরিকতার মাধ্যমে লকডাউন কর্মসূচি পরিচালনা, বিদেশ ও অন্যান্য জেলা শহর থেকে আগত মানুষকে হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত, জনগণকে সচেতন করতে স্বাস্থ্যবিধি সম্বলিত ১০ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, বেশ কয়েকবার মাইকিং, করোনা সংক্রমণ হওয়ার পদ্ধতি ও প্রতিরোধ বিষয়ে ফেস্টুন, ব্যানার প্রদর্শণ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা হ্যান্ডবিল আকারে প্রচার, অসচেতন কর্মজীবি জনসাধারণের মধ্যে ফ্রি প্রায় ২০ হাজার মাস্ক ও ১০ হাজার পিপিই বিতরণ, জেলা প্রশাসনের সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি ও শরীরে এন্ট্রিবডি তৈরী করতে পুষ্টিকর খাদ্য ও ঔষধ প্রদান, সরকার ঘোষিত রেড জোন এলাকায় প্রবেশ ও বাহির পথে লকডাউন এবং উক্ত এলাকার ম্যাপ ও ব্যানার প্রদর্শন, করোনা উপর্সগ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী মানুষের দাফনে সরাসরি সহায়তা ও নিরাপদ সৎকার কাজের সরঞ্জামাদি সরবরাহ বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে নরসিংদী জেলায় মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
মহামারী করোনা প্রতিরোধের যুদ্ধে শুরু থেকেই নরসিংদীতে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর দিকনির্দেশনায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘অগ্র সেনানী’র ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। লক ডাউনের পর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে গণপরিবহনে যাত্রী সেবা তদারকি অব্যাহত রেখেছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসন।
একই সাথে চালিয়েছেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করণ ক্যাম্পেইন। বলা যায়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনীতিবিদদের সাথে পালা দিয়েই বিভিন্নমুখী কার্যক্রম চালিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করছেন ত্রাণ সামগ্রী। হট লাইনে ফোন দিলেই মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত অভুক্ত মানুষের ঘরে পৌছে দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী। রমজান মাসে এতিম, প্রতিবন্ধী, ভাসমান ও ছিন্নমূল অনাহারী মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন ইফতার। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ভ্রাম্যমাণ ফ্রি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। ডাক্তারদের সাথে নিয়ে তৈরী ভ্রাম্যমান টিম অ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়ী বহর স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন এলাকা থেকে এলাকায়।
শুধু তাই নয়, করোনার ছোবল থেকে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্ষা করতে তার কার্যালয়ে জীবাণুনাশক ট্যানেল বসানো হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত: ব্যক্তির লাশ দাফনে এলাকাবাসী ভয় পেলেও জেলা প্রশাসনের লোকেরা স্বমহিমায় এসব লাশের দাফন সম্পন্ন করছেন।
করোনার দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষকে সর্বাধিক সেবা প্রদান করে আলোচনায় এখন জেলা প্রশাসক। তাই সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন জেলা প্রশাসকের ভূয়সী প্রশংসা। সর্বশেষ লকডাউন নিশ্চিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকান্ড আলোচনার সম্মুখ ভাগে চলে আসেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এছাড়া করোনাকালে নরসিংদী জেলা প্রশাসক এখানকার অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে দুই হাজার দুইশত বিশ মেট্রিকটন চাল, এক কোটি একুশ লাখ পচাশি হাজার নগদ টাকা, ৩৪ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, সাতচলিশ হাজার দুইশত নিরানব্বই মেট্রিকটন ওএমএস এর খাদ্য-বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৯৯৩টি পরিবারের মধ্যে বিতরণ করেন। এতে করে মোট ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৮টি পরিবার উপকৃত হয়। অতিস¤প্রতি নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের নির্দেশে নরসিংদী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: শাহ আলম মিয়া স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালীদের বেদখলে থাকা প্রায় ২১ একর খাস জমি, যার আনুমানিক মূল্য ১১০ কোটি টাকা বেদখলমুক্ত করেছেন।
তিনি যোগদানের পরপরই নরসিংদী জেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধা কর্ণার স্থাপন করেছেন। যার ফলে কোমলমতি শিশুরা ছোটকাল থেকেই মুক্তিযোদ্ধা সর্ম্পকে সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। তিনি বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির জন্য কর্মসংস্থান নরসিংদী নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ৫ শতাধিক বেকার ছেলে-মেয়েকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জনপ্রশাসন পদক এবং ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাপক অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রীর শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসকের পদক লাভ করেন।
এছাড়া নরসিংদী জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সম্মুখে সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় একটি জয় বাংলা চত্ত¡র নির্মাণ করেছেন। গত ৯ মার্চ তিনি নরসিংদী জেলার ৭৭টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কষ্টলাগবে “ছায়া পরশের” উদ্বোধন করেছেন। যারফলে এখন থেকে বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আর বৃষ্টিতে কিংবা রৌদ্রে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হবেনা। এসকল কর্মকান্ডে ভালবাসার বহি:প্রকাশ মনে করছেন নরসিংদীবাসী। এসকল কর্মকান্ড ছাড়াও নরসিংদীতে অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।
নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) শাখায় দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: শাহরুখ্ খান জানিয়েছেন, নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন স্যার এর সুদক্ষ নির্দেশনায় জেলার ৬টি উপজেলায় সকল সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ করোনা সংকট মোকাবেলায় ও লকডাউন নিশ্চিতে দিনরাত কাজ করেছেন। পাশা-পাশি অসহায়দের খাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ও মাক্স বিতরণসহ সকল ধরনের কাজ করেছেন। এক কথায় মানব সেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। স্যার এর মত একজন জনবান্ধব জেলা প্রশাসক কাছে পেয়ে নরসিংদীবাসী আজ গর্বিত।