জেমস আব্দুর রহিম রানা যশোর প্রতিনিথি দৈনিক শিরোমণিঃ আধুনিক যুগ তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান অবশ্যই মানব সভ্যতার জন্য কল্যাণময়ী। যার বলেই চিকিৎসা, কৃষি, যাতায়াত ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ অন্যান্য বিস্ময়কর এবং গৌরবময় ভূমিকার জন্য মানুষ সভ্যতার ছোঁয়া পেয়েছে। সেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের জনপদে। কিন্তু আধুনিক যুগে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে বিজ্ঞান শুধু উপকার করছে না বরং প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য আজ হারাতে বসেছে গ্রামিন জনপদ। প্রাচীনকালের অনেক ঐতিহ্য আছে যেগুলো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না পরবর্তী প্রজম্মকেও জানানোর প্রয়োজন। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কত কিছুই না পাল্টাচ্ছে পাল্টায় সংস্কৃতি, সভ্যতা। সেই সঙ্গে বদলে যায় মানুষের জীবনধারা। এ পরিবর্তনের রেশ ধরেই হারিয়ে যাচ্ছে সংস্কৃতির সুপরিচিত অনেক পুরনো ঐতিহ্য স্বাধীন বাহন পালকি। মুলত পালকি দেখতে কিছুটা হলেও সিন্ধুকের মতো। সাধারণত তৈরি করা হতো বাঁশ ও কাঠ দিয়ে কারুকাজ বিশিষ্ট এবং উপরে দেয়া হতো টিনের কারুকার্যময় নিখুঁত ছাউনি। ভিতরে যাত্রীর বসার আসন এবং যাত্রী আরামের জন্য উভয় পাশ্বে ও পিছনে বালিশের ব্যবস্তা রাখা হতো। পালকির উপরাংশের সামনে ও পেছন দিকে মজবুত লম্বা বাঁশ সংযুক্ত থাকতো যাহাতে সামনে পিছনে দুইজন করে চার জন বেহারা মিলে কাঁধে বহন করে চলতে পারেন। সেকালে পালকি ছাড়া বিয়ের বর ও কনের নেওয়ার জন্য বিকল্প কোন বাহনের কথা ভাবাই যেত না। বর বহনের বেলায় এতে বিভিন্ন বাহারি রঙের রঙিন পাতলা কাগজ কেটে সাজানো হতো, যাতে এক পলকে সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। কিন্ত বর বা বৌকে বহন করার সময় পালকির চতুর্দিকে কাপড় দিয়ে ঘেরা থকতো যাতে ভেতরে সহজে দৃষ্টি না পড়ে। আবার কখনওবা জোড়া পালকিতে বর-কনেকে আলাদা বহন করা হতো। বর্তমান বিয়েতে বিভিন্ন ধরনের উন্নত দামী দামী গাড়ির ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি ধনী পরিবারের বিয়েতে হেলিকপ্টার দেখা যায়। তাছাড়া আগেকার দিনে গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুর্গম পথে জমিদার বা মোড়ল মাতব্বররা গন্তব্যে যেতেন পালকি চড়ে। আবার পালকি চড়ে জমিদার ব্রাক্ষণ বা বড়লোকের বাড়ির পার্শ্ব দিয়ে বা ব্যক্তিগত রাস্তা দিয়ে যেতে বিভিন্ন বিধি নিষেধ ছিল। পালকি চড়ে তারা গৌরব ও অহংকার করতো। প্রজা সাধারণ কেউ ভয়ে পালকি চড়ত না, চড়লে কঠিন শাস্তি পেতে হতো। বয়োবৃদ্ধ মাওলানারা ওয়াজ মাহফিলে যেতেন, আবার পীর মুর্শিদরা ভক্ত ও আশেকদের বাড়িতে যেতেন পালকিতে চড়ে। চলাচলের জন্য হিন্দু মুসলিম মহিলারা যেতেন বাবার বাড়ি, শশুর বাড়ি। তাই বর্তমানে আর পালকির কদর নেই বললেই চলে। পালকি আমাদের দেশের জাতী, ধর্ম, বর্ণ সবার কাছে সমান পছন্দনীয় ছিলো। এটি আমাদের দেশের হাজারও বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী একটি বাহন। পালকির কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে ওঠে অনেকের। এই সম্পর্কিত অনেক প্রাচীন গান, পুঁথি, কবিতা, প্রবাদ, প্রবচণসহ কিংবদন্তি রয়েছে। তবে পালকি যে একটি ঐতিহ্যবাহী বাহন তা আজও প্রমান পাওয়া যায় বিয়ের কার্ডে পালকি ও বেহারাদের ছবি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে।ওই পালকি আজ স্মৃতির অন্তরালে প্রায়। বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাহনটি কাল্পনিক বা রূপকথার কাহিনীর মতোই অনেকটা। বাঙালির হাজার বছরের বাহন পালকি কিছুদিন পর আর দেখা মিলবে না, দেখতে যেতে হবে যাদুঘরে। আর এ বাহনটিকে চেনাতে হলে তাদেরকে যাদুঘরে নিয়ে যাওয়া ছাড়া হয়তো কনো উপায়ান্তর থাকবে না।#
৫ views