এস এ ডিউক ভূঁইয়া-তিতাস (কুমিল্লা)প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার তিতাসের ৮ ম শ্রেণির ছাত্র আশ্রাফুল আমিনকে হত্যার মামলায় প্রধান আসামীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১,সিপিসি-২।
র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা,নরসিংদী ও কুমিল্লায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন,কুমিল্লার দাউদকান্দির মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে মো.সাইদুল ইসলাম (১৯), দাউদকান্দির মন্তুস চন্দ্র সাহার ছেলে কিশোর চন্দ্র সাহা (১৮) ও চান্দিনার মো. আব্দুল হালিমের ছেলে মো. রিফাত হোসেন (১৮)।
উল্লেখ্য,কুমিল্লার তিতাস উপজেলার শাহপুর গ্রামের মো. আল আমিনের ছেলে মো. আশ্রাফুল আমিন (১৬) ৮ম শ্রেণির ছাত্র। করোনা ভাইরাসের সংকট কালীন সময়ে সংসারের হাল ধরতে পড়ালেখার পাশাপাশি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত আশ্রাফুল অমিন।গত ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অটোচালানো অবস্থায় সে নিখোঁজ হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর দৈয়াপাড়া নোমান সাহেবের মাছের প্রজেক্ট এর দক্ষিণ পাড়ে খালী জায়গায় একটি আম গাছের সাথে পিছমোড়া করে বাধা,মুখে ও নাকে স্কচটেপ দ্বারা মোড়ানো অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।নিহতের বাবা বাদী হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর দাউদকান্দি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা দিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকেই আসামীরা পলাতক ছিল।প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা তিন জন হত্যার আগের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বুলিরপাড় মসজিদের মাঠে পরিকল্পনা করে যে ১টি অটোরিকশা ছিনতাই করতে হবে। পরিকল্পনার সূত্র থেকে ঘটনার আগের দিন গৌরিপুর বাজার থেকে মো. সাইদুল ইসলাম (১৯) একটি স্কচটেপ, দড়ি ক্রয় করে। ঘটনার দিন প্রথমে মো. সাইদুল ইসলাম অটোরিকশা ছিনতাই এর জন্য মো. রিফাত হোসেনকে মোবাইলে কল দেয় এবং কিশোরকে তাদের সাথে থাকতে বলে,তখন রিফাত কিশোরকে মোবাইলে কল দিয়ে সন্ধ্যার পরে বুলিরপাড় ব্রীজে আসতে বলে। রিফাত ও কিশোর বুলির পাড়ব্রীজে একত্রিত হয়ে সাইদুলকে মোবাইলে কল দেয়। মো. সাইদুল ইসলাম গৌরীপুরে থাকায় মো. রিফাত হোসেন ও কিশোর চন্দ্র সাহা,বুলিরপাড় ব্রীজ থেকে হাসানের অটো নিয়ে মো. সাইদুল ইসলামকে আনতে যায়। গৌরীপুর থেকে মো. সাইদুল ইসলামকে সাথে নিয়ে মো. হাসানের অটোতে করে কড়িকান্দির দিকে যায়। কড়িকান্দির দিকে ছিনতাইয়ের জন্য কোন অটো রিকশা না থাকায় তারা পুনরায় গৌরিপুরে চলে আসে।সেখানে ভিকটিম আশ্রাফুল আমিন অটো নিয়ে দাড়িয়ে ছিল। তখন মো. সাইদুল ইসলাম গৌরীপুরে দাড়িয়ে থাকা ভিকটিম আশ্রাফুল আমিনকে টার্গেট করে। তারা কিশোরকে দিয়ে অটো রিকশা ভাড়া করে নদীর পাড়ে নিয়ে যেতে বলে এবং পিছনে পিছনে হাসানের অটোতে করে রিফাত ও সাইদুল নদীর দিকে যায়। নদীর পাড়ে লোকজন থাকায় তারা কাজ করতে না পারায় মো.সাইদুল ইসলাম কিশোরকে কল দেয় অটো রিকশাটি নিয়ে দৈয়ারপাড় এলাকায় যেতে বলে। তখন কিশোর তাদের কথা মতে অটোচালককে দৈয়ারপাড় এলাকায় নিয়ে আসে এবং সেখানে রিফাত ও সাইদুল যায়। তখন অটোচালক আশ্রাফুলল আমিন ভাড়া দাবি করলে কিশোর তখন ভাড়ার জন্য রিফাত ও সাইদুলকে ডাকে। তখন রিফাত, সাইদুল ও কিশোর তিনজনই একত্রিত হয়ে প্রথমে সাইদুল চাকুর ভয় দেখিয়ে মুখে হাত দিয়ে অটোচালক আশ্রাফুলকে আমগাছের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে কিশোর আম গাছের সাথে দড়ি দিয়ে আশ্রাফুলের হাত বাধে, রিফাত দুই পা আম গাছের সাথে বাধে এবং সাইদুল মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। অটোচালককে বেঁধে রেখে তারা অটো রিকশা নিয়ে চলে যেতে চায়। রিফাত অটোরিকশা চালাতে গিয়ে কিছুদুর সামনে গিয়ে, অটোরিকশা নিয়ে পড়ে যায়।তখন তারা অটোরিকশা উঠিয়ে পুনরায় চালু করতে গেলে অটো রিকশায় চার্জ না থাকায় তারা তিনজন অটোরিকশা ফেলে যে যার বাড়িতে চলে যায়। রাতে রিফাত সাইদুলকে ফোন দেয় তখন সাইদুল বলে আমি সেখানে গিয়েছিলাম এবং দেখতে পাই অটোচালক মারা গেছে। ঘটনার পরের দিন সকালে রিফাত ঢাকা, কিশোর নরসিংদীতে চলে যায় এবং সাইদুল বাড়িতেই থাকে।
উক্ত বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদেরকে কুমিল্লার দাউদকান্দি মডেল থানায় হস্তান্তর করা প্রক্রিয়াধীন।হত্যা কারীদের মতো সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।