জেমস আব্দুর রহিম রানা যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ২৭ টি বিলের কৃষকদের দূর্বিসহ দিন শেষ হচ্ছেনা। জলাবদ্ধতায় নিঃশ্ব হতে হতে সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন তারা। অভিশপ্ত ভবদহের কারনে জমি থাকতেও ফসল ফলাতে না পেরে মানবেতর জীবন কাটছে অনেকের। কোন কোন বিলে টানা নয়টি বছর জলাবদ্ধতার কারনে ফসল হয়না।বাড়িতে পানি, রাস্তায় পানি, স্কুল-কলেজের মাঠ ডুবে আছে। বিলগুলোর করুণ দশা। শ্যাওলা জমে ভরাট হয়ে আছে। উপয়ান্ত না পেয়ে এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেঁছে নিচ্ছেন।কোন কোন বিলের কৃষকরা নামমাত্র মূল্যে বড় বড় মৎস্য ঘের মালিকদের কাছে জমি হারি দিয়ে রেখেছেন। বিল গুলোতে হাজার হাজার বিঘার ঘের। অথচ এক বিঘা জমিতে বছরে পান ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। গবাদিপশু পালন ছিলো এ অঞ্চলের মানুষের আয়ের আরও একটি বড় মাধ্যম। কিন্তু বাড়িতে জল থাকায় সেটাও দুরূহ হয়ে উঠেছে। ফলে নারী- পুরুষ মিলে বদলাচ্ছেন পেশা।এমনই এক ভিন্ন ধর্মী পেশা বেছে নিয়েছেন অভয়নগরের বিল ঝিকরার পাড়ের বেশ কিছু কৃষক। তারা দিনভর ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় শ্যাওলা কুড়িয়ে তা বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার। ভোরে সূর্য উঠার আগেই ছোট্ট ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে তারা নেমে পড়েন বিলে। শুরু করেন শ্যাওলা কুড়ানোর কাজ। এক ডিঙ্গি নৌকা শ্যাওলা কুড়াতে লেগে যায় প্রায় তিন ঘন্টা। শ্যাওলা কুড়িয়ে বিল সংলগ্ন সড়কে স্তুপ করে রাখেন তারা। সকাল ১০ টার দিকে আসে ঘের মালিক মহাজনদের নসিমন করিমন। সেই নসিমন করিমনে তারা এ সকল শ্যাওলা তুলে দেন। বিনিময়ে এক নৌকা শ্যাওলার দাম হিসেবে পান ১শ’ ৫০ টাকা। আর তা দিয়েই চলে পরিবারের ভরন পোষন। বর্তমানে ভিন্ন ধর্মী এ পেশায় জড়িত হয়েছে এ এলাকার প্রায় ২৫/৩০ জন কৃষক।শ্যাওলা গুলো মাছের ঘেরে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছেন তারা।কেবল ঝিকরার বিল নয়; অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা তাদের পেশা বদলাচ্ছেন। অনেক এলাকায় এভাবে বিল থেকে শ্যাওলা কুড়িয়ে বিক্রি করে জোগাচ্ছেন পরিবারের রসদ। উপজেলার রাজাপুর গ্রামের এমনই একজন কৃষক পরিতোষ কুমার। তিনি জানান, যারা শ্যাওলা কুড়ানোর কাজ করছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই বিলে ফসলী জমি রয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতায় নয় বছর বিল ডুবে থাকায় ফসল ফলাতে পারেন না। উপয়ান্তর না পেয়ে তারা এ পেশা বেছে নিয়েছেন। অনেকে সন্তানদের লেখাপড়া চালাতে হিমসিম খাচ্ছে; কেউ কেউ মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে পরিবারের হাল ধরেছে। ফসল না হওয়ায় শ’ শ’ কৃষক নওয়াপাড়া নদী বন্দর এলাকায় ঘাট শ্রমিকের কাজ করছেন। ভাগ্যের বিড়ম্বনায় আমাদের সুখের দিনগুলো হারিয়ে গেছে। যোগ করেন কৃষক পরিতোষ।পরিতোষ কুমার বলেন, কেবল আমরাই নয়, অন্যান্য এলাকায় অনেকে আমাদের মতো শ্যাওলা কুড়িয়ে বিক্রি করে পরিবারের ভরন পোষন চালাচ্ছেন।
৪ views