জেমস আব্দুর রহিম রানা যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ দফায় দফায় ভারী বর্ষণে যশোরের মনিরামপুরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাড়ির আঙিনায়, এমনকি বসতঘরে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে উপজেলার পূর্ব এলাকার কয়েকটি ইউনিয়নের ২০-২৫টি গ্রামের অন্তত দুই হাজার পরিবার। পানি উঠেছে চলাচলের রাস্তাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।পানির কারণে বাড়ির বাইরে যেতে পারছে না মানুষ। কর্মহীন অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটছে অনেকেরই। এমনকি জলাবদ্ধতায় মৃতের দাফনের জন্য একটু শুকনো মাটি পর্যন্ত পাচ্ছেন না স্বজনেরা।সম্প্রতি উপজেলার পাঁচকাটিয়া গ্রামে জলাবদ্ধ আঙিনায় টিউবওয়েলের পানি আনতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে সরস্বতী রায়(২০)নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর পলাশ রায়ের স্ত্রী।গত মঙ্গলবার(৫ অক্টোবর)দুপুরে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।একই দিন সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান মনোহরপুর ইউনিয়নের বয়ারখোলা গ্রামের এয়াকুব আলী।কবরস্থানে হাঁটু পানি ওঠায় তাঁর দাফন করতেপারছিলেন না স্বজনেরা। পরে চারপাশে বালুর বস্তা দিয়ে পানি আটকিয়ে তাঁর দাফনের ব্যবস্থা হয়। মনোহরপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাষ্টার মোঃ মশিয়ূর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।চেয়ারম্যান মাষ্টার মোঃ মশিয়ূর রহমান বলেন, ভবদহের কারণে মনোহরপুর ইউনিয়নের চারটি গ্রামের প্রায় আড়াই শ বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। অনেকের রান্নাঘরে পানি ওঠায় বন্ধ হয়েছে রান্না করে খাওয়া।ভবদহ একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত দর্শনীয় স্থান। এর চারদিকে থইথই পানি আর পানি। গেল কয়েক বছর ধরে ভবদহের শ্রী নদীর স্লুইসগেট দিয়ে পানি না সরায় মনিরামপুরের হরিদাসকাটি, কুলটিয়া, নেহালপুর, মনোহরপুর ও দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাড়িঘর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। শ্রী নদীতে পলি জমায় স্রোত নেই। দফায় দফায় শত শত কোটি টাকা খরচ করে নদী খননের কাজ চললেও তা কাজে আসেনি। কয়েক মাস ধরে স্লুইসগেটে সেচপাম্প বসিয়ে পানি সেচে পার করার কাজ চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাতেও কাজে আসেনি।চলতি মৌসুমেও বর্ষার শুরুতে কুলটিয়া ইউনিয়নের হাটগাছা, সুজাতপুর, বাজেকুলটিয়া গ্রামে পানি উঠতে শুরু করে। একে একে ওই ইউনিয়নের আলিপুর, পোড়াডাঙ্গ, বাগডাঙ্গ, দহকুলা, পাড়িয়ালিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দী হয় হাজারো পরিবার।সম্প্রতি বৃষ্টিতে পানি উঠেছে হরিদাসকাটি ইউনিয়নের নেবুগাতী,কুচলিয়া, পাঁচকাটিয়া ও ভুলবাড়িয়ার শতাধিক বসতঘরে। পানি উঠেছে মনোহরপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর, বয়ারখোলা, রোজিপুর ও কপালিয়া গ্রামের দুটি ওয়ার্ডের প্রায় ২৩০টি বসতবাড়িতে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজিয়াড়া, দত্তকোনা, বিপ্রোকোনা ও ঝিকরডাঙ্গা অর্ধশত বাড়িতে। পানি রয়েছে ২০-২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায়ও।বসতবাড়ির আঙিনায় পানি ওঠায় মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। অনেকে বাড়ির উঠানে সাঁকো গেড়েছেন। বেশ কিছুদিন ধরে এমন পরিস্থিতি হলেও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসেননি কেউ।বিপ্রকোনা গ্রামের আজহারুল ইসলাম বলেন, `ভ্যান চালায়ে খাই। উঠোনে হাঁটুপানি হওয়ায় বাড়ি থেকে বের হতি পারছি না। তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জুটছে না।হরিদাসকাটি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রণব কুমার বলেন, গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া মুক্তেশ্বরী নদী ভবদহের শ্রী নদীতে মিশেছে। ভবদহের স্লুইসগেট দিয়ে পানি না সরায় মুক্তেশ্বরী নদীর পানি আর গ্রামের পানি সমান হয়ে গেছে। পানি কোনো দিকে সরছে না। বসতবাড়িতে এক-দেড় ফুট পানি জমে আছে।মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, `সম্প্রতি বাজেকুলটিয়া এলাকায় গিয়েছি। সেখানে বহু মানুষের বসতঘরে পানি উঠেছে।দ্রুত জলাবদ্ধ এলাকায় ত্রাণসহায়তা দেব।যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের ঘটনা। পানি সরানোর যে কোনো টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার নিরসন হবে না। তিনি বলেন, ভবদহ স্লুইসগেট দিয়ে অল্প অল্প করে পানি বের হচ্ছে। জলাবদ্ধতা কমতে এক মাস সময় লাগতে পারে।