রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এ কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাহত হবে না। এমন মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে শনিবার বিকেলে কক্সবাজার বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। বলেন, মুহিবুল্লাহ না থাকলে প্রত্যাবাসন হবে না এ ধারণা সত্যি নয়।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন জটিল বিষয়। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি চীনও এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে। এতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে দুইদিনের সফরে শুক্রবার কক্সবাজারে যান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ও তার সংগঠন যে কাজ করছিল, এখন হয়তো স্বল্পকালীন কিছুটা ব্যাহত হবে, কারণ তারা কিছুটা ভয়ে রয়েছে। তবে ততটা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন না বলে মন্তব্য করেন মাসুদ বিন মোমেন।
পররাষ্ট্র সচিব উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে কক্সবাজারের স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় বিধিনিষেধ আরোপ করায় কেউ সেখানে যেতে পারেননি।
এ সময় জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব শ্রাবস্তি রায় ও অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়নসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন তিনি।
২০১৯ সালের ১৭ই জুলাই রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন,’আমরা (রোহিঙ্গারা) দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাই।’
এর আগে তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
২০১৯ সালের ২৫শে আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্টের পর দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসে আট লাখ রোহিঙ্গা। সেই সময় বাস্তুচ্যুত অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এ দেশে এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ।