রেদোয়ান হাসান সাভার ঢাকা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ ঢাকার সাভারের কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পৌর এলাকায় সরকারি রাস্তা বন্ধ করে ৮ পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাস্তাটি উদ্ধার করতে গেলে মিথ্যা মামলার শিকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। এ নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এসব পরিবারের লোকজন।ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকায় মৃত আজগর আলীর স্ত্রী ৭০ বছর বয়স্কা বৃদ্ধা আছিয়ার বসবাস। বৃদ্ধার স্বামী ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ১৯৭৯ সনে ভাটপাড়ায় সাড়ে ৯ শতাংশ জমি কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেন।পরে সেখানে আজগর-আছিয়ার পাঁচ মেয়ে ও তাদের জামাতারাসহ মোট আটটি পরিবার বসতি গড়ে তুলেন। জমি ক্রয়ের সময় পৌরসভা স্বীকৃত ও রেকর্ডভূক্ত একটি রাস্তা ছিল যা দিয়ে এই আট পরিবার চলাচল করে আসছিল। ২০০৭ সালে রাস্তাটি প্রতিবেশী মরিয়ম বেগম বন্ধ করে বাড়ি নির্মান করবেন বলে প্রস্তুতি নিলে তিনি ভুক্তভোগী আট পরিবারের বাঁধার সম্মুখীন হন।এ সময় মরিয়ম বেগম সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়রী করলে ডায়রীর সূত্র ধরে তৎকালীন সাভার মডেল থানার এএসআই জাফর ইকবাল আজগর আলী ও তাঁর পরিবারকে হয়রানী করা শুরু করেন।এক পর্যায়ে নোটিশ করে থানায় ডেকে নিয়ে পৌর কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করে দেবেন বলে জানান জাফর ইকবাল। পরে ২০০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারী এএসআই জাফর ইকবাল পুলিশ নিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পৌরসভার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে মরিয়ম বেগমের বাড়ির দেয়াল নির্মান করিয়ে দেন।বিষয়টি নিয়ে আজগর আলী সে সময় মহা পুলিশ পরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। অবরুদ্ধ একটি পরিবারের সদস্য বৃদ্ধা আছিয়া বেগম জানান, এই রাস্তা নিয়ে মতিন নামে একজন আমাদের পরিবারের সকলের নামে থানায় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। এ সময় প্রতিপক্ষের হুমকী ও পুলিশী হয়রানী হয়ে আমার স্বামী আজগর আলী ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।তিনি আরও বলেন,বর্তমানে মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেও রাস্তা মুক্ত করতে পারিনি। এ রাস্তার জন্য আমরা সকলে বন্দি জীবন-যাপন করছি।অবরুদ্ধ পরিবারের আরেক সদস্য আছিয়ার মেয়ে পারভীন আক্তার বলেন, এ রাস্তাটি চাওয়ার অপরাধে আমাদের পরিবারের সকলের নামে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়েছে। অনেক বছর মামলার পেছনে আমরা দৌড়িয়েছি। রাস্তা নিয়ে আমরা যেখানে গিয়েছি সেখানেই আমাদের হুমকী দেয়া হয়েছে। আমাদের নামে বিভিন্ন কোর্টে মামলা দেন মরিয়ম বেগম। যেদিন মামলার রায় হবে তার আগে নতুন করে আমাদের নামে আরেকটি মামলা করলে তার খবর শুনে আমার বাবা আজগর আলী স্ট্রোক করে মারা যান।বর্তমানে অন্য বাড়ির উপর দিয়ে চলাফেরা করতে গেলেও তাদের বকাঝকা খেতে হচ্ছে। প্রতিপক্ষের নেপথ্যে ক্ষমতাধর একজন সরকারি কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। প্রতিবেশী রাজিয়া জানান, স্বামী মৃত্যুর পর সম্প্রতি বৃদ্ধা আছিয়া বেগম লিখিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা চেয়ে অভিযোগ করেছেন। কলমি নক্সা ও বিআরএস রেকর্ডে রাস্তাটি রয়েছে। সম্প্রতি দেয়ালের পরে আরেকটি লোহার গেইট তৈরী করে আরো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে।এ ব্যাপারে কথা বলতে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরিয়ম বেগমকে পাওয়া যায়নি। যে কারণে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গণি বলেন, বৃদ্ধা আছিয়া বেগমের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে রাখার কোন বিধান নেই। এছাড়াও নক্সাতে রাস্তা থাকলে তা বন্ধ করা কারো জন্য উচিৎ হয়নি।