মাহমুদুন্নবী, পত্নীতলা( নওগাঁ) প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ নওগাঁর পত্নীতলায় একটি অবৈধ কারখানায় ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের কান্তাকিসমত গ্রামের পাশেই কারখানাটির অবস্থান। এই কারখানার কারণে ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ। কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় অনুমোদনহীন কারখানায় পুরাতন ব্যাটারী পুড়িয়ে সীসা তৈরিতে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী আইনের লোক চক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। এ পরিণতি দেখার যেন কেউ নেই। এ নিয়ে পরিবেশের চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে আশ-পাশের কয়েকটি গ্রামে। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদের কোন লেশ পরিলক্ষিত না হলেও অন্তরে অন্তরে প্রতিবাদের টর্নেডু বইছে স্থানীয়দের।চিকিৎসকেরা বলছেন, এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে। এসব কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের পদার্থ মানুষের শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ ও ক্যান্সারের মতো কঠিন ও জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আর কোনো পশু কারখানা থেকে আশ-পাশের ঘাস সংগ্রহ করিয়ে গবাদী পশুকে খাওয়ানোর ফলে গবাদি পশু অসুস্থ কিংবা মারাও যেতে পারে।সরেজমিন দেখা যায়, চারপাশে টিনের তৈরী বেড়া(বেস্টনি) ও টিন দিয়ে তৈরী ঘরের মধ্যে সাইনবোর্ড বিহীন একটি অবৈধ কারখানা স্থাপন করে পুরাতন ব্যাটারী পুড়িয়ে সীসা তৈরীর কাজ করছে। কারখানার ভেতরে শ্রমিকেরা কাজ করছেন। কেউ পুরোনো ব্যাটারির ওপরের অংশ খুলে প্লেট (ব্যাটারির ভেতর থাকা পাত) বের করছেন। কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করে সংরক্ষণ করছেন। কয়েকজন শ্রমিক জানান, চুল্লির মধ্যে কাঠ ও কয়লায় অ্যাসিড মিশ্রিত ব্যাটারির বর্জ্য বা প্লেট সাজানো হয়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিলে তা গলতে থাকে। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক পাখা থেকে বাতাস দেওয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সিসা তৈরি হয়। কারখানার কাজ চালু করলেই বিষাক্ত কালো ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পরে। শ্বাস-প্রশ্বাসে ভেসে আসে ঝাঁঝালো গন্ধ।যার ফলে স্থানীয়দের শ্বাস-প্রশ্বাসে রেবশ কষ্ট স্বীকার করতেই হচ্ছে। এসকল অসুবিধার কারনে দিনের আলোতে তাদের পরিপূর্ণ উপায়ে কাজ আরম্ব না করলেও রাতের আধারে প্রশাসনের অন্তঃচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে বৈদ্যুতিক আলোতেই কাজ করছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, তাদের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক লাইনটি বৈধ তো? অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তাদেরকে জিঞ্জাসাবাদে জানা যায়, এভাবে রাতে তিনবার একই চুল্লিতে পুরাতন ব্যাটারী পুড়ানো হয়। পুরাতন ব্যাটারী পুড়িয়ে সেই ব্যাটারী থেকে সীসা বের করা হয় সেই সীসাকে গলিত অবস্থায় লোহার তৈরি কড়াইয়ে ঢেলে পাটা তৈরি করা হয় তৈরিকৃত প্রতিটি পাটার ওজন প্রায় ১৫/২০ কেজি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার ম্যানেজার আলম বলেন, কাগজপত্র সম্পর্কে আমরা কিছুই বলতে পারব না। এসব কিছু মালিকই বলতে পারবেন।কারখানার মালিক গাইবান্ধা জেলার খায়রুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের কোন ছাড়পত্র বা কোনও দপ্তর থেকেই অনুমোদন নেওয়া নেই। সারা দেশে এভাবেই এই কারখানাগুলো চলে। তবে টাকার বিনিময়ে এই প্রতিবেদন না করার জন্য বার বার অনুরোধ করেন তিনি।নাম প্রকাশ্যে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্তও করায়নি এই কারখানার মালিক। এলাকার লোকজন কিছু বললেই নানা রকমের ভয়-ভীতি দেখিয়ে চলে যায় তারা। অনুমোদনহীনভাবে গড়ে উঠা ওই কারখানার কারণে এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শ্বাস প্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় তাদের। তাছাড়া এই ঘাস গরু-ছাগল খেতেও চায় না।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, গাছের ফুল অবস্থায় সীসা যদি উড়ে গাছের ফুলে পড়ে তাহলে এতে ফসলের ক্ষতি হবে। তিনি আরও জানান এটা ধানের বা অন্যান্য ফসলের চেয়ে মানবদেহের জন্য বেশি ক্ষতিকর।অন্যদিকে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের আমাইড় ইউপি মেম্বার রফিকুল ইসলামের জমির উপর তার লোকজনের সহায়তার ছত্রছায়ায় এ সকল কারখানা চালাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা গলানোর কারণে জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে এসব অবৈধ কারখানা মালিকদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। বরং তারা কেউ কেউ তাদের এমন কর্মকান্ডকে যথার্থ প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন সরকার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির বিষয়ে আমি জেনেছি লিখিত অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।