রেদোয়ান হাসান সাভার প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাভারে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে আটকে পড়ার প্রতিবাদে এবার নিজেরাই মহাসড়ক অবরোধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা।শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকালে তাদের আকস্মিক এ কর্মসূচিতে যোগ দেয় রাষ্ট্রয়ত্ত সাত ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারীরা। পরে একে একে তাদের সাথে একাত্মতা জানায় সাধারণ মানুষ ও পথচারীরাও।জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের ডাকা ধর্মঘটে কলেজে ভর্তিচ্ছু এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারীরা সকাল থেকেই বিপাকে পড়েন। যানবাহন সংকটে আটকে পড়া কলেজে ভর্তিচ্ছু এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক পর্যায়ে নিজেরাই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে অবরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় তারা প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে মহাসড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে সড়কের দু’পাশে আটকা পড়ে অসংখ্য যানবাহন।মিরপুর বাঙলা কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আবরার হোসেন জানান, ভোরবেলায় তিনি ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসে কোন গাড়ি পাননি। কোন উপায় না পেয়ে রিকশায় করে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখতে পান তার মত অনেকেই মহাসড়কে যানবাহনের অপেক্ষায়। এক পর্যায়ে দীর্ঘ সময় অবস্থানের পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা নিজেরাই মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেন। পরে তাদের সঙ্গে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাড়াও সাধারণ যানবাহন ব্যবহারকারীরাও যোগ দেন।এদিকে, আকস্মিক এই কর্মসূচিতে ব্যক্তিগত যানবাহনে করে ঢাকা যাওয়ার পথে শিমুলতলা আটকে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী তাসনিয়া রহমান। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, নিজেদের ব্যক্তিগত যানবাহন থাকলেও তিনি শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিকে সমর্থন করেন। তার ভাষায় নিজেদের ব্যক্তিগত যানবাহনে করে কেউ পরীক্ষার হলে যেতে পারবে আর পরিবহন ধর্মঘটে কেউ আটকে থাকবে- এটা হতে পারে না।যানবাহন সঙ্কটের পাশাপাশি অবরোধের কবলে আটকে পড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছোট ভাইকে নিয়ে মারাত্মক ভোগান্তির কবলে পড়েন রফসান আহমেদ নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোথাও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার যেমন হুট করে তেলের দাম বাড়িয়েছে তেমনি পরিবহন শ্রমিক-মালিকরাও পরিবহন যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ধর্মঘট ডেকে বসেছেন।বাবুল মিয়া নামে একজন পরিবহন মালিক জানান, করোনার ধাক্কায় প্রায় দুই বছরে তারা নাজুক অবস্থায় পড়েছেন। তেলের দাম বাড়ায় একটি বাস থেকে প্রতিদিন গড়ে ২২শ’ টাকা ভাড়া না পাওয়ায় আয় কমে দাঁড়িয়েছে ১৪শ’ টাকায়। ব্যাংকের কিস্তি, সরকারি টোকেন, রাস্তার চাঁদা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাড়তি ভাড়া সবকিছু মিলিয়ে জীবন চালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। যে কারণে যৌক্তিকভাবেই তারা পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছেন।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সাথে সাথে সরকার ভাড়া বিন্যাস করলে এমন সংকট তৈরি হতো না। এ জন্য সরকারকেই দায়ী করেন তিনি।
এদিকে আগামী ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। ১ হাজার ৯শ’ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৮ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থী। দূরদূরান্ত থেকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেকেই পথে নেমে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাভারে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে আটকে পড়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ সমূহের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ছাড়াও সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা আটকে পড়েছেন। প্রতিবাদে তারা নিজেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কার্যত সাধারণত ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারকারীরা আটকে পড়েছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। এমনিতেই সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে তার ওপর তাদের এই কর্মসূচি দুর্ভোগের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
৪ views