রেদোয়ান হাসান সাভার,ঢাকা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে ‘গভীর ষড়যন্ত্রে’ জড়িত থাকার অভিযোগে সাভারে সরকারি সকল অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক স্মরণ সাহাকে।এ বিষয়টি সাভার উপজেলার আইন শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সভার কার্যবিবরণীতে-ও অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। সেই সভার কার্যবিবরনী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব।এর আগে নিজ দলের নাট্যকর্মি বিপাসা ও সুইটিকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আলোচনায় আসেন স্মরণ সাহা। বিপাসা ও সুইটি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, দলের নাট্যকর্মি হিসেবেও স্মরণ সাহার হাত থেকে রক্ষা পায়নি তারা।এদের মধ্যে বিপাশাকে দেশে ও সুইটিকে দেশের বাইরে নিয়ে ধর্ষনের চেষ্টা ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সেসময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়।সাংস্কৃতিক কর্মিদের ওপর এমন যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রাজনৈতিক নেতাদের জানিয়েও প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা।এমনকি থানায় লিখিত অভিযোগ করেও উল্টো স্মরণ সাহার হেনস্থার কবলে পড়েন নির্যাতিতা সাংস্কৃতিক কর্মিরা।এদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগে সাভারে সরকারি সকল অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব জানান, কুমিল্লা কান্ডের পর স্মরণ সাহা সাভারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা চালান। গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তিনি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একের পর এক উষ্কানীমূলক পোষ্ট দেন।প্রশাসন বিষয়টি ধৈর্য্য ও সহনশীলতার মধ্যে পর্যবেক্ষণের পর্যায়েই স্মরণ সাহা কৌশলে সরকারি ছুটির দিকে উপজেলা চত্বরে জ্বালাও পোড়াও শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন।আমাদের প্রশ্ন স্মরণ সাহা কে? সারাদেশে যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,প্রশাসন যখন প্রাণন্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তখন স্মরণ সাহা নিজেকে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।সাংস্কৃতিক কর্মি না হয়ে-ও উগ্র ধর্মীয় সংগঠনের নেতার ভূমিকায় নেমেছেন। একের পর এক উষ্কানীমূলক পোষ্ট দিয়েছেন। এমনকি বন্ধের দিন জেনেও উপজেলা চত্বরে মিছিল সমাবেশ ও জ্বালাও পোড়ান শ্লোগান দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে আতংক ছড়িয়েছেন।এসব ষড়যন্ত্রে জড়িতদের আর কোন ছাড় নয় জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, আমরা উপজেলা পরিষদের মিটিং এ রেজুলেশন করে স্মরণ সাহাকে সকল প্রকার অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি।এদিকে স্মরণ সাহা গায়ের জোরে অবৈধভাবে সাভার সরকারি কলেজের কক্ষ নাটকের মহড়ার জন্যে ব্যবহার করছেন- প্রশাসনের কাছে এমন অভিযোগ আসার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে স্মরণ সাহা কোন ক্রমেই সাভার সরকারি কলেজ স্থাপনা ব্যবহার করতে পারেন না। বিষয়টি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।সূত্রমতে, স্মরণ সাহা সাভারে এসে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেকে প্রতিভূর পর্যায়ের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। তার এ অপচেষ্টা দৃষ্টিকটু পর্যায়ে পৌঁছুলে তার খবরদারী কাটছাঁট করার ব্যবস্থা নেয় উপজেলা প্রশাসন।পূর্ববর্তী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপার নির্দেশে স্মরণ সাহাকে বয়কটের পর্ব শুরু হলেও নানা মহলের চাপে স্মরণ সাহা আবার উপজেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে সরব হন।স্মরণ সাহার যৌন নির্যাতনের শিকার একাধিক সাংস্কৃতিক কর্মি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্মরণ সাহা কতটা লম্পট ও চরিত্রহীন তা কেবল আমরাই জানি।তাদের একজন বলেন, দেরিতে হলেও তারা বিচার পাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে নিষিদ্ধ করার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান তিনি।সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, বিতর্কিত স্মরণ সাহার বিরুদ্ধে অনেকেই লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সভাপতিত্বে এ সংক্লান্তে একটি রেজুলেশন নেয়া হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।স্মরণ সাহার হাতে নিগৃহীত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফাহজানা জলি বলেন, এই লম্পট স্মরণ সাহা কি করে সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিনিধিত্ব করে সেটাও একটা প্রশ্ন।তিনি জানান, তার অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে আমি আর কত নারী নির্যাতন, আর কত হ্যারাসমেন্ট শীর্ষক কলাম লিখার পর সেও আমার চরিত্রহনন করে নানামুখী তৎপরতা চালায়।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মিরা নিজেই যদি নৈতিকভাবে শুদ্ধ না হন তাহলে তো মুশকিল। স্মরণ সাহার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা বলছেন, তা যদি সত্যি হয় তাহলে সেটা নি:সন্দেহে দুঃখজনক।তবে এবিষয়ে জানতে চাইলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাভার উপজেলার সাধারণ সম্পাদক স্মরণ সাহা বলেন, আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছি। এছাড়া তার ফেসবুক আইডি থেকে কোন উস্কানিমূলক প্রচারণা চালানো হয়নি বলেও দাবি তার।