জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার পর চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে চাহিদার বেশি ফার্নেস অয়েল নেওয়া শুরু করে পিডিবির নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি-বেসরকারি ৪৫ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে পিডিবির চাহিদা না থাকলেও চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চাহিদার অতিরিক্ত জ্বালানি সরবরাহ দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে বিপিসিকে। পরবর্তীতে গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত চাহিদা দিলেও আন্তর্জাতিক বাজারে দর পতনের পর আবার ফার্নেস অয়েল নেয়া কমিয়ে দেয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এতে পিডিবির চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ফার্নেস অয়েল আমদানি করে বর্তমানে সরবরাহ দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছে বিপিসি।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে চাহিদার বাইরে অতিরিক্ত ১২৬.৮৬ শতাংশ ফার্নেস অয়েল বেশি সরবরাহ নিলেও গত তিন মাসে চাহিদার চেয়ে ৫৩.৩৮ শতাংশ কম নিয়েছে পিডিবি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আলেজ (ট্যাংকের মজুদ সক্ষমতা) সংকটে পড়ে ইস্টার্ন রিফাইনারির জ্বালানি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বিপিসি। সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিপিসি।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশে বর্তমানে ফার্নেস অয়েল নির্ভর ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি বেসরকারি আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্লান্ট) এবং ২০টি সরকারি। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে মাসে ৬০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা রয়েছে মাসে ১৫ হাজার টন। বেসরকারি আইপিপিগুলোতে মাসে চাহিদা থাকে ৪৫ হাজার টন। তবে আমদানি সুবিধা নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে ফার্নেস অয়েল আমদানি শুরু করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এরপর আইপিপিগুলোতে ফার্নেস অয়েল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বিপিসি। আইপিপিগুলোকে ফার্নেস অয়েল আমদানির সুযোগ দেওয়া হলেও শর্ত ছিল ১০-১২ শতাংশ ফার্নেস অয়েল বিপিসি থেকে নিতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কম থাকলে চুক্তির শর্ত মোতাবেক চাহিদার ১০-২০ শতাংশ জ্বালানি বিপিসি থেকে নেয়ার কথা থাকলেও নিত না।
প্রথম আট মাসে চাহিদার চেয়ে বেশি ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করতে গিয়ে মজুদ সংকটে পড়ে বিপিসি। এ নিয়ে সেপ্টেম্বরে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভার আলোচনার প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে আইপিপিগুলোর জন্য ২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮শ টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহের চাহিদা দেয় পিডিবি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে ৯১ হাজার ৮শ টন, অক্টোবরে ১ লক্ষ ১ হাজার টন, নভেম্বরে ৫৭ হাজার ৬শ টন এবং ডিসেম্বরে ৩৫ হাজার ৪শ টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ৯২ হাজার ৩৩ টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করে বিপিসি। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ২ লক্ষ ৫১ হাজার ২শ টন চাহিদার বিপরীতে আইপিপিগুলো মাত্র ১ লক্ষ ১৭ হাজার ১১৪ টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহ নেয়। তিন মাসের চাহিদার চেয়ে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮৬ টন কম সরবরাহ নেয় তারা। এতে স্টোরেজ সংকট তৈরি হওয়ায় বিপিসির আমদানি সিডিউল এলোমেলো হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে নভেম্বর মাসের ফার্নেস অয়েলের চালান জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সরবরাহ দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের চিঠি দেয় বিপিসি। একইসাথে ডিসেম্বর মাসের আমদানির চালান বাতিলও করে বিপিসি।
এ ব্যাপারে কমিটির আহ্বায়ক বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য পিডিবির চাহিদার প্রেক্ষিতে আমরা ইতোমধ্যে ফার্নেস অয়েল আমদানি করেছি। কিন্তু গত তিন মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ নেয়নি। এতে ফার্নেস অয়েল রাখার স্থান সংকুলান হচ্ছে না।