মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি, কপিল দেব: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় আরোপিত ১১ দফা বিধিনিষেধ অমান্য করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা ভাইরাসের ‘ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারাদেশে সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজারবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সকলকে সতর্ক হওয়ার জন্য এবং আরোপিত বিধিনিষেধগুলো মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হল। আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হওয়া এই বিধিনিষেধসমূহ অমান্য করলে আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গত সোমবার (১০ জানুয়ারি) করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) এর নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক কাৰ্যাবলি/চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় আরোপিত ১১ নির্দেশনাগুলো হলো:
১. দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সকল জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
২. ১২ বছরের বেশি বয়সী সকল শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
৪. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।
৫. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।
৭. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং-এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সকল মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।
১০. উন্মুক্ত স্থানে সর্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।