নজরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীর আমদিয়া ইউনিয়নে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। জমির ওপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা কমছে। অবাধে কাটার ফলে আশপাশের ফসলি জমি ভেঙ্গে পড়ছে পুকুরে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অন্যান্য ফসলি জমির মালিকগণ। দ্রত এর বিরদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ধানের ফসলী জমিগুলোর মধ্যে বালির আস্তর পড়ে আছে। প্রতিনিয়ত ইটভাটার মালিকদের লোকজন আশপাশের ফসলি জমির মাঠ থেকে ট্রলি যোগে মাটি যোগান দিচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। প্রতিদিন এই সকল ট্রলি চলাচল করার ফলে ফসলের উপর বালির আস্তর পড়ে যায় ও অনেক জমি আবাদহীন অবস্থায় পড়ে আছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল। ইটের ভাটার মালিকদের নিয়োগকৃত লোকজন মাটি কাটার কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে ফসলি জমির মাটি নামেমাত্র খরিদ করে ইটের ভাটায় দিচ্ছেন। এতে করে এলাকার পরিবেশ দূষণসহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষককূুল। কিছু জমি প্রায় ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট গর্ত করে পুকুরে রপান্তরিত করে ফেলা হয়েছে।
মোঃ শাহিদুল্লাহ নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক জমির মালিক এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তার উপর হামলা করার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন- আমি একজন অসহায় প্রতিবন্ধি মানুষ। কষ্ট করে কিছু টাকা ধারদেনা জমিতে ধান করছি। বালু পড়ে আমার ক্ষেতের ফসল নষ্ট হচ্ছে। বাধা দেওয়ায় আমাকে জুয়েল ও নয়ন নামে দুইজন মারধর করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক মোঃ মনির হোসেন বলেন, আমদিয়া ইউনিয়নের বরদিয়া গ্রামের মোঃ জুয়েল ও নয়ন আমার জমির পাশের জমি ৭০ হাত গর্ত করে মাটি কাটার ফলে আমার ফসলি জমি এখন গর্তে ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমাকে না জানিয়ে রাতের আধাতে চুরি করে কিছু জমির মাটিও কেটে নিয়ে যায়। এখন আমরা খুবই বিপদে আছি।
অপর এক জমির মালিক জামাল উদ্দিন বলেন, এভাবে খাড়া করে যদি মাটি কাটতে থাকে তাহলে আমার ফসলি জমি ভেঙ্গে পড়বে। তখন জমিতে আর ফসল করা যাবে না।
অভিযোগ সম্পর্কে মাটি কাটার ঠিকাদার মোঃ জুয়েল বলেন, জমির মালিক তার জমিতে পুকুর করছেন। আমি তার দেখাশোনা করছি। আমার বিরদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। প্রতিবন্ধি শাহিদুল্লাহকে মারধরে বিষয়ে তিনি বলেন, মাটি বহনকারী গাড়ি যাতায়াতে শাহিদুল্লাহ বাধা দিলে ও গাড়ি ভাংচুর করলে গাড়ির ড্রাইভার তাকে ধাক্কা দেয়। পরে আমরা জানতে পেরে বিষয়টি মিমাংসা করে দেই।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সাইদুর রহমান জানান, জমির উপরি ভাগে মাটি কাটার ফলে ফসলের বিভিন্ন জৈব উপাদানের ঘাটতির দেখা দেয়। ফলে জমিতে উৎপাদন হ্রাস পায়। এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, ইটভাটায় মাটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে থাকেন মূলত জেলা প্রশাসন। এরপরও মাটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইটভাটা মালিকদের বিরদ্ধে যদি অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।