মাইদুল ইসলাম গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ গাইবান্ধার আলোচিত হাসান আলী হত্যার অভিযোগপত্র থেকে দুই আসামির নাম বাদ না দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়েও আসামীদের নাম বাদ না দেয়ার অভিযোগ তুলে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে টাকা ফেরত চাওয়ার কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। সেই কথোপকথনের অডিওটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র নানা আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হওয়ায় ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসির দায়িত্বে থাকা তৌহিদজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।ফোনালাপের ওই অডিওতে আসামির স্বজনকে বলতে শোনা যায়, মামলাটি দুর্বল করতে দুই আসামির বিরুদ্ধে কম শাস্তিযোগ্য ধারার অভিযোগ আনা এবং আসামির তালিকা থেকে দুইজনের নাম বাদ দেওয়ার কথা ছিল। তবে কথা না রাখায় আসামির স্বজন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দুই দফায় দেওয়া ৮ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ৭ লাখ টাকা ফেরত চাইছেন।গত বছরের ১০ এপ্রিল গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ নেতা ও দাদন ব্যবসায়ী মাসুদ রানার বাসা থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে মামলা হয়। নিহতের স্ত্রী বীথি বেগম গাইবান্ধা সদর থানায় মাসুদ রানা, শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী রুমেল হক ও খলিলুর রহমানকে আসামি করে মামলাটি করেন। খলিলুর জামিনে এবং রোমেল পলাতক রয়েছে। প্রথমে মামলার তদন্ত করেন গাইবান্ধা সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) সেরাজুল ইসলাম। পরে গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি, বর্তমানে সুন্দরগঞ্জের কঞ্চিবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক মানষ রঞ্জন দাস দায়িত্ব পান। সর্বশেষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের ওসি মো. তৌহিদুজ্জামান।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান এ বছরের ১৬ জানুয়ারি মাসুদ রানা ও খলিলুর রহমানের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৮ জানুয়ারি তিনি সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। পরে আদালত সংশোধিত অভিযোগপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন। গাইবান্ধা কোর্ট পুলিশ ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অভিযোগপত্রটি সংশোধনের জন্য বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ফেরত পাঠায়। গত ৭ মার্চ মাসুদ রানাসহ তিন আসামিকেই অভিযুক্ত করে আদালতে সংশোধিত অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।টাকা নেওয়ার বিষয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় মামলারকারি কর্মকর্তা বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি তৌহিদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমার সঙ্গে কারও কথা হয়নি।এছাড়া মামলায় আসামির নাম বাদ দেওয়া বা ধারা কমবেশী করে দেওয়ার কোন কথা হয়নি।উল্লেখ্য, গাইবান্ধা শহরের নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত উপদপ্তর সম্পাদক ও দাদন ব্যবসায়ী মাসুদ রানার কাছ থেকে প্রায় দুই বছর আগে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেন শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলী। এই টাকা সুদ আসলে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দাঁড়ায়। সুদের টাকা দিতে না পারায় গত বছরের ৫ মার্চ লালমনিরহাট থেকে হাসানকে মোটরসাইকেলে করে তুলে আসেন মাসুদ। তিনি হাসানকে নিজের বাসায় ৩৬ দিন আটকে রাখেন। মাসুদ রানার বাসা থেকে গত বছর ১০ এপ্রিল হাসানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ঘটনার দিনই মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে জেলা কারাগারে আছেন। এই ঘটনায় দুই পলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।