মিন্টু মিয়া,রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিম উদ্দিনের ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও, বাড়িত নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছাউনি, একটু খানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি। কবিতাটির অংশ কয়েক যুগ আগের হলেও অনুরুপ ভাবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার একটি পরিবারে। সারা দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ছুয়া লাগলেও এখানকার উন্নয়নের কথা জানে না ওই অসহায় পরিবারটি। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চালে কোন টিন নেই, পলিথিন ও শোলা দিয়ে কোন মতো চালের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক চট দিয়ে ঘরের বেড়া দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতরে পানি পড়ে। ঘরে কোন খাট বা চৌকি নেই। সাপ, বিচ্চুর ভয় থাকলেও রাতে মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে পড়ে। একটু ঝড় ও বৃষ্টি হলেই ঝুপড়ি ঘরটি হালাঢোলা করে। যে কোন সময় ঘরটি পড়ে যেতে পাড়ে।
আতংকে ঘুম হয় না তাদের। একই রুমে মা,বাবা ও ছেলেকে নিয়ে প্রতিদিন এভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য সম্মত কোন টয়লেট নেই। বিশুদ্ধ পানির অভাব। ছেলেটি এরই মধ্যে একটি দোকানে কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন। অভাব অনাটনের কারনে ঘর মেরামত করতে পারছে না। হিন্দু সম্প্রদায় হওয়ায় কেউ তাদের খোঁজেও নেইনি। দিনে তিন বেলা খাওয়াও হয় না ঠিক মতো। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখনই দেখা যাচ্ছে একটি পরিবারের করুন চিত্র। আশপাশে প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্য ও প্রশাসনের নজরে পড়ে নাই অসহায় দরিদ্র পরিবারটির উপর। কেউ এগিয়ে আসেনি মানবতায়। প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় অনেক পরিবারকে ঘর দেওয়া হলেও প্রশাসনের উদাসীনতার কারনে নজরে আসেনি এই পরিবারটির উপর। উপজেলা পরিষদ থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কলেজ পাড়া গ্রামে পরেশ চন্দ্র শীল হিন্দু সম্প্রদায়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা কালা চন্দ্র শীল ও মাতা মৃত মহামায়া শীল। ঘরে রয়েছে স্ত্রী বাসন্তী রানী শীল (৪৫) ও ছেলে গোবিন্দ শীল (২৫)। পরেশ চন্দ্র শীল পেশায় একজন নরসুন্দর (নাপিত)। শারীরিক অসুস্থতায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। গত ৩০ বছর থেকে তিনি এ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও নূন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থা। ঘরে তিন কন্যা সন্তান বড় হওয়ায় বসতবাড়ির কিছু অংশ বিক্রি করে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তার বসতভিটা রয়েছে প্রায় তিন শতক জমি। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। তার আকুতি একটি ঘর পেলে মৃত্যুর আগে শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকতে পারব।পরেশ চন্দ্র শীল কান্না জড়িত কন্ঠে জানায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অনেক লোকের কাছে গেছি একটি ঘরের জন্য কেউ কথা রাখেনি। যে ঘরে বসবাস করছি সেটা মানুষের জন্য উপযোগী নয়। তারপরও স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ওই ঘরেই থাকতে হচ্ছে।
৮ views