মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের সহড়াবাড়িয়া গ্রামে স্বামীর নির্যাতনে সেলিনা খাতুন (৩৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ২ সন্তানের জননী সেলিনা সহড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ-এর স্ত্রী।
শুক্রবার (৭এপ্রিল-২২) সকাল সাড়ে ৯টার সময় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, গত মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সেলিনা তার স্বামীর ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে দৌড়ে গিয়ে প্রতিবেশীদের এমন খবর দেয় তার স্বামী আব্দুল ওয়াহেদ। এসময় প্রতিবেশীরা সেলিনাকে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলতে দেখে তাকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে, কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য পরামর্শ দেন। কুষ্টিয়ায় ৩দিন আইসিইউতে থাকার পর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
আরোও জানা যায়, গত ১৩ বছর আগে পারিবারিক সম্মতিতে গাংনী উপজেলার সাহারবাটী ইউনিয়নের ধর্মচাকী গ্রামের চেংগাড়া পাড়ার আজিজুল হকের মেয়ে সেলিনা খাতুনের সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের সহড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদের। বর্তমান তাদের সংসারে জন্ম নিয়েছে ২টি সন্তান। বড় সন্তান অনামিনা খাতুন (১২) ও ছোট ছেলে নাহিদ(১০)। নাহিদ মানষিক প্রতিবন্ধী। ১৩ বছরের সংসার জীবনে প্রায়ই তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো।
সেলিনার বড় ভাই মহিবুল ইসলাম জানান, আমার বোনের সাথে তার স্বামী ওয়াহেদের প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো। ইতোমধ্যে যৌতুক হিসাবে ওয়াহেদকে ১ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে বলে চল্লিশ হাজার টাকা তার কথার কোন সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না।তারপরও আমার বোনের উপর প্রায়ই নির্যাতন করতো। সর্বশেষে গত মঙ্গলবার রাতে সেলিনাকে ওয়াহেদ হত্যার লক্ষ্য নিয়ে বেধম মারপিট করে। যখন সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় ওয়াহেদ সেলিনাকে তড়িঘড়ি করে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এমন নাটক সাজানোর মাধ্যমে প্রতিবেশীদের জানায়। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এই হত্যার সঠিক বিচার চেয়েছে সেলিনার বড় ভাই।
এদিকে,কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন ডাক্তার জানিয়েছেন, সেলিনাকে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সেলিনার ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে তার বাবার পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিনাকে তার বাবার বাড়ি ধর্মচাকী গ্রামে জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্থান ময়দানে দাফন করা হয়। এ বিষয়ে সেলিনার স্বামী আব্দুল ওয়াহেদ জানান, পারিবারিক ছােট-খাটাে বিষয়কে কেন্দ্র করে সেলিনা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। আবার আমার প্রতিবন্ধি ছেলে পিছন থেকে ওড়না টেনে ধরে ছিলো, আমার মনে হয় আমার ছেলের সাথে এমন হয়েছে। আমার প্রতিবন্ধি ছেলে কোন কিছু (আঙ্গল) চেপে ধরলে তা ছাড়াতে তিন-চার মিনিট সময় লাগে তাই ঐ সময়ের মধ্যে ওড়নাতে গলায় ফাঁস লেগে গিয়েছিলো বলে আমার মনে বলছে। এসে দেখি পড়ে আছে বিষয়টি আমি টের পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় হাসপাতালে নিয়েছিলাম।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।